ছেলের কফিনের সামনে শোকার্ত গীতাদেবী। নিজস্ব চিত্র
ঘটনার পরে প্রায় তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পিছনে কারণ কী, তা জানা যায়নি। এমনকি, দেহ বাড়িতে পৌঁছে দিতে আসেননি কাশ্মীরের সেনা ছাউনির কোনও অফিসার। এ সবের প্রতিবাদে সোমবার সকালে দেহ পৌঁছনোর পরে তা পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে ক্ষোভ জানালেন মৃত সেনাকর্মীর পরিজনেরা। যোগ দেন আশপাশের বাসিন্দারাও। শেষে কাশ্মীরের সেনা অফিসারেরা ফোনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিলে দেহ সৎকারের অনুমতি দেন মৃতের বাবা।
কুলটির শীতলপুরের বাসিন্দা অভিষেক রায় কাশ্মীরে সেনা ছাউনিতে সিগন্যাল ম্যান পদে কর্মরত ছিলেন। শনিবার সকাল ৭টা নাগাদ সেখান থেকে ফোনে পরিবারকে অভিষেকের মৃত্যুসংবাদ জানানো হয়। বাবা অশোক রায় ও মা গীতা রায়ের দাবি, এক সেনা অফিসার তাঁদের জানান, অভিষেক নিজের সার্ভিস বন্দুকের গুলিতে আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু খবর পাওয়ার পরেই অশোকবাবু অভিযোগ করেন, ছেলের মৃত্যুর পিছনে গভীর চক্রান্ত আছে। কখন, কী ভাবে ও কী কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে জানা প্রয়োজন বলে দাবি তাঁর। এমনকি, রাষ্ট্রপতির কাছেও এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করবেন বলে জানান তিনি।
সোমবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ পানাগড় সেনা ছাউনির এক অফিসার-সহ সেনাবাহিনীর চার জনের একটি দল মৃতদেহ নিয়ে শীতলপুরে পৌঁছন। সঙ্গে ছিল কুলটি থানার পুলিশও। পরিবার ও প্রতিবেশী জানতেন, এ দিন সকালে দেহ ফিরবে। তাই প্রতিবেশীরা ভোর থেকেই ভিড় জমিয়েছিলেন বাড়ির সামনে। দেহ পৌঁছনোর পরে কান্নায় ফেটে পড়েন বাড়ির লোকজন।
এরই মধ্যে ক্ষোভের কথা জানান অশোকবাবু। ছেলের কর্মস্থল কাশ্মীর থেকে কেন কোনও সেনা অফিসার এসে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানালেন না, প্রশ্ন তোলেন তিনি। দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যেতে বাধা দিয়ে পড়শি ও পরিবারের লোকজন ক্ষোভ জানাতে থাকেন। শেষে পানাগড় থেকে আসা সেনাকর্মীদের মধ্যস্থতায় অশোকবাবু ছেলের কর্মস্থলের এক অফিসারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তার পরে দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। অশোকবাবু বলেন, ‘‘কাশ্মীরের ওই অফিসার আমাকে সেখানে যেতে বলেছেন। তার পরেই তিনি বিশদে জানাবেন বলে কথা দিয়েছেন।’’ সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ডিসেরগড়ের শ্মশানঘাটে দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।