আসানসোল স্টেশনে। ছবি: পাপন চৌধুরী
সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হোক আসানসোল স্টেশনের। শনিবার বর্ধমান স্টেশনে বিপত্তির পরে এমনই দাবি জানাচ্ছেন সাধারণ রেলযাত্রী, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন, ব্যবসায়িক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা। তবে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের দাবি, স্টেশনের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তার কারণ নেই। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই স্টেশনে মোট সাতটি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। এক থেকে ছ’নম্বর প্ল্যাটফর্মের উপরে রয়েছে স্টেশনের পুরনো ভবনগুলি। রেলযাত্রীদের একাংশের দাবি, পাঁচ ও ছ’নম্বরে থাকা ভবনের অংশগুলি নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তাঁরা দেখালেন, ভবনগুলির একাধিক দেওয়ালে ফাটল। কোথাও বা সার বেঁধে গজিয়েছে গাছ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলকর্মীদের একাংশই জানিয়েছেন, দ্রুত গাছগুলি না কাটা হলে ভবিষ্যতে ফাটল বাড়তে পারে। রেললাইনের ‘মুঘলসরাই প্রান্তে’ একটি বহুতল ভবনের জানালার কার্নিস ভেঙেছে।
কয়েকজন যাত্রীই দেখালেন, ছ’নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝামাঝি, ভবনের দেওয়াল ঘেঁষে কী ভাবে আবর্জনা ডাঁই করে রাখা হয়েছে। এর ফলে, দেওয়ালে নোনা ধরছে। নিত্যযাত্রী রূপেশ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘গোড়া থেকে এই বিষয়গুলি যদি নজর করা হয়, তা হলে বিপত্তি এড়ানো যেতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির কারণে বিপত্তি ঘটে।’’
এই পরিস্থিতিতে ‘ডিভিশনাল রেলওয়ে ইউজ়ারস কনসাল্টেটিভ কমিটি’র (ডিআরইউসিসি) প্রাক্তন সদস্য মহাদেব শর্মার আর্জি, ‘‘বর্ধমানের ঘটনার প্রেক্ষিতে আসানসোল স্টেশনেরও পুরোদস্তুর স্বাস্থ্য-পর্যবেক্ষণ করা দরকার রেলের।’’ পশ্চিম বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্সের কার্যকরী সভাপতি পবন গুটগুটিয়া জানান, পূর্ব রেলের জিএম-এর কাছে আগামী ১০ জানুয়ারি দেখা করার সময় নেওয়া হয়েছে। তাঁরও বক্তব্য, ‘‘ওই দিন আসানসোল স্টেশনের সামগ্রিক পর্যবেক্ষণের দাবি জানানো হবে।’’ একই দাবি করেছেন ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের (ইআরএমইউ) কেন্দ্রীয় নেতা সুধীর রায়, ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস কংগ্রেসের (ইআরএমসি) জোনাল নেতা পিএল মিত্রও। তাঁরা জানান, ডিআরএম-এর সঙ্গে দেখা করে এই দাবির পাশাপাশি, তাঁরা কিছু পরামর্শের কথা জানাবেন।
যদিও আসানসোল স্টেশনের স্বাস্থ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছেন রেলের ‘জ়োনাল রেলওয়ে ইউজ়ারস কনসাল্টেটিভ কমিটি’র (জেডআরইউসিসি) সদস্য মিঠু ঘাটি। তাঁর কথায়, ‘‘সম্প্রতি কয়েক কোটি টাকা খরচ করে স্টেশন ও ভবনের সংস্কার হচ্ছে। তাই কোনও সমস্যা হবে না বলেই মনে করছি।’’ ডিভিশনের কর্তারাও জানান, স্টেশনটিকে নতুন রূপ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। স্টেশন ও প্রাচীন ভবনগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় নির্দিষ্ট সময় অন্তর। কোথাও সমস্যা নেই।
তবে বর্ধমানের ঘটনার পরে ‘সতর্ক’ ডিভিশনের কর্তারা। ডিআরএম (আসানসোল) সুমিত সরকার বলেন, ‘‘বর্ধমানের ঘটনার পরেই সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় আধিকারিকদের নির্মাণ বিষয়ক পর্যবেক্ষণ করিয়ে ‘ফিট’ শংসাপত্র নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
পুরুলিয়ার কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজাদের কাছ থেকে জমি কিনে ১৮৬৩-র জুলাইয়ে এই স্টেশনটি তৈরি করে ইস্ট ইন্ডিয়ান রেল। মূলত কয়লা পরিবহণের জন্যই রানিগঞ্জ থেকে এই রেলপথ সম্প্রসারিত হয়। ১৯২৫-এ ডিভিশনের মর্যাদা পায় আসানসোল। প্রায় ৫৬৫ ‘রুট’ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে এই ডিভিশন। রেল-কর্তারা জানান, ডিভিশনের সর্বাধিক ব্যস্ততম স্টেশন আসানসোল। দেশের মধ্যেও ২৯তম ব্যস্ততম স্টেশন আসানসোল। প্রতি দিন নানা ধরনের প্রায় ১৭১ জোড়া ট্রেন চলে আসানসোল দিয়ে।