প্রতীকী চিত্র।
চলন্ত ট্রেনের দিকে পাথর ছোড়ার ঘটনা বাড়তে থাকায় চিন্তায় পড়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের সম্পত্তির ক্ষতির পাশাপাশি বিপদ বাড়ছে যাত্রীদেরও। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যার নিরিখে পূর্ব রেলের চারটি ডিভিশনের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আসানসোল ডিভিশন। কী ভাবে এই সমস্যা দূর করা যায়, সে নিয়ে পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে আশ্বাস রেলকর্তাদের।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর এখনও পর্যন্ত চারটি ডিভিশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে মালদহ ডিভিশনে, মোট ১৩টি। আসানসোল ডিভিশনে ন’টি এবং হাওড়া ও শিয়ালদহ ডিভিশনে ছ’টি করে এমন ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনে বসে যাত্রীদের অনেকেই জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখেন। পাথর ছোড়ার ঘটনা তাঁদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সম্প্রতি শিয়ালদহ ডিভিশনে পরপর এমন ঘটনায় গুরুতর জখম হন কয়েকজন যাত্রী। ফলে, যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। পাথরের ঘায়ে চালক জখম হলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে বলে রেল-কর্তারা মনে করছেন। জানলার কাচ ভাঙার মতো সম্পত্তির ক্ষতির বিষয়টি তো আছেই।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা একটি ফৌজদারি অপরাধ। রেলওয়ে আইনের ১৫৩ ও ১৫৪ ধারায় অভিযুক্তদের এক বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা, অথবা উভয়ই হতে পারে। রেলকর্তারা জানান, দু’-একটি ঘটনার পিছনে হিংসাত্মক মনোভাব থাকলেও বিভিন্ন ঘটনা খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মূলত রেললাইনের পাশে বসবাসকারী কমবয়সিরা খেলার ছলে এমন কাজ করে থাকে। ফলে, শুধু আইনি পথে সমস্যা দূর হবে না। তাই আরপিএফের তরফে সচেতনতা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ২৫ এপ্রিল থেকে ‘অপারেশন সাথী’ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আরপিএফের তরফে রেললাইন ও লেভেল ক্রসিংয়ের পাশের গ্রাম বা বসতির নাবালক ছেলেমেয়ে, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া-সহ এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য নানা প্রক্রিয়া চলছে। পোস্টার, লিফলেট বিলি করা হচ্ছে এলাকায়।
বিপাকে যাত্রী
যেখানে আতঙ্ক: জামতাড়া ও বিদ্যাসাগর এলাকা।
ধরপাকড়: এখনও ধৃত ১০ জন।
শাস্তি: রেলওয়ে আইনের ১৫৩ ও ১৫৪ ধারায় এক বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা দু’রকমই হতে পারে।
ব্যবস্থা: রেললাইন লাগোয়া বসতিতে সচেতনতা গড়ে তুলতে ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন সাথী’।
আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফের এক আধিকারিক জানান, সচেতনতা গড়ার পাশাপাশি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। আরপিএফের সিনিয়র সিকিওরিটি কমিশনার সিএম মিশ্র জানান, মূলত জামতাড়া ও বিদ্যাসাগর স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটছিল। অভিযুক্তদের ধরতে আরপিএফের বিশেষ দল গড়া হয়। মোট দশ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘কড়া নজরদারির পাশপাশি, ‘অপারেশন সাথী’ও চলছে। ফল মিলছে। শেষ ঘটনাটি ঘটেছে অগস্টে। গত দু’মাসে আর কোনও ঘটনা ঘটেনি।’’