স্টেশনের নাম বদলে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে হবে শোনা যেতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। নিত্যযাত্রী থেকে ইতিহাসবিদ কেউই নাম বদলে সায় দেননি। আপত্তি ছিল জৈন সম্প্রদায়েরও। সম্প্রতি বর্ধমান স্টেশনের নাম বদল হচ্ছে না, জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। সরকারের সিদ্ধান্তে স্বস্তিতে সব পক্ষ।
যদিও খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামের বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটির দাবি, ২০১২ সাল থেকে বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তনের দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। কমিটির তরফে বর্ধমানের গবেষক সর্বজিৎ যশ বলেন, “ওঁয়ারি গ্রামে ভগৎ সিংহের সঙ্গে ১৫ দিন আত্মগোপন করার পর বোঁয়াইচন্ডী স্টেশনের ছোটরেল ধরে পালিয়েছিলেন বটুকেশ্বর দত্ত। বর্ধমানের নাম বদলে সরকারের আপত্তি থাকলে ওই স্টেশনের নাম বিপ্লবীর নামে করার দাবি জানাব।’’
সম্প্রতি পটনা শহরে ওই বিপ্লবীর বাড়ি গিয়ে স্টেশনের নাম পরিবর্তনে কেন্দ্রীয় সরকারের সায় আছে বলে জানিয়েছিলেন বিহারের বিজেপি নেতা তথা রেল প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই। বিপ্লবীর মেয়ে ভারতী দত্ত বাগচি সে কথা জানিয়েছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে কী কথা হয়েছে আমার জানা নেই। কেন্দ্র সরকারের ঘোষণাও আমি শুনিনি। কোনও মন্তব্য করব না।’’ জানা গিয়েছে, দু’দিন আগে দিল্লির জৈন সম্প্রদায়ের কয়েকজন রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের ধর্ম, ভগবানের সঙ্গে বর্ধমানের নাম কী ভাবে জড়িত, তার প্রামাণ্য নথি দিয়ে আসেন। ওই দলকেই রেলমন্ত্রী জানান, স্টেশনের নাম বর্ধমানই থাকবে। এ দিন বর্ধমান জৈন মাইনরিটি কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক রাজ সিংহ ভুতুরিয়া বলেন, “বর্ধমান নামের সঙ্গে জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের নাম জড়িয়ে রয়েছে। পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চাইছিল রেল। আমরা কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকারের সমস্ত স্তরে প্রতিবাদ জানিয়েছি। সবার মিলিত চেষ্টার জন্যই কেন্দ্র সরকার নাম পরিবর্তন করার দিকে এগোতে পারল না।’’ তাঁর দাবি, কয়েকদিন আগে রেল প্রতিমন্ত্রী নিজে ফোন করে নাম পরিবর্তন করা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কিউরেটর রঙ্গন জানা বলেন, “শেষ পর্যন্ত রেল ভুল সিদ্ধান্ত নিল না, এটা ভাল খবর।’’ নিত্যযাত্রী সংগঠনের পক্ষে অশোক চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণবিনোদ যশরাও বলেন, “স্টেশনের নাম পরিবর্তন নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলাম। তার আগেই কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিল।’’ মেমারির একটি স্কুলের শিক্ষিকা মৌসুমি মুখোপাধ্যায়, রাজ কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যদের কথায়, “স্টেশনের নাম বদলে কিছু হয় না। যাঁর নামে রাখা হবে তিনিও যে সম্মানিত হন না, সেটা প্রমাণিত। নামের সঙ্গে এলাকার পরিচয় জড়িয়ে থাকে। নাম বদলালে সেটা নষ্ট হয়ে যায়।’’
রেলের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করা রমেন সরের দাবি, ‘‘রেলের ইতিহাসে বর্ধমান রাজ পরিবারের অবদান রয়েছে। আর রাজ পরিবার নিয়ে আবেগ রয়েছে বর্ধমানের। স্টেশনের নামটা না বদলে আবেগকেও বাঁচিয়ে রাখল রেল।’’