মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দলে উন্নয়নের কাজ কার্যত থমকে গিয়েছে কালনা ও দাঁইহাট শহরে। সোমবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দুই পুরসভা নিয়ে কোনও মন্তব্য না করায় বিস্মিত দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ।
পরিষেবা-সহ নানা বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রকাশ্যেই তুলোধনা করেন কয়েকটি পুরসভাকে। পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল পুরসভাকে কাজের নিরিখে ‘নিকৃষ্টতম’ পুুরসভার তালিকায় রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গাপুর পুরসভার কাজেও অসন্তোষের কথা গোপন রাখেননি।
এক জেলা তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন একের পর এক পুরসভার কাজকর্মে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন, তখন মনে হচ্ছিল, এই বুঝি তিনি কালনা আর দাঁইহাট পুরসভার প্রধানদের মুণ্ডপাত করবেন। শেষপর্যন্ত তিনি কিছু বলেননি। ফলে আপাত স্বস্তি মিলেছে।’’ তিনি জানান, সভা শুরুর আগে দলের অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, কালনা ও দাঁইহাট পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন বৈঠকে হাজির ছিলেন কালনা ও দাঁইহাটের পুরপ্রধান। উপ-পুরপ্রধান সহ তৃণমূলের বাকি পুরপ্রতিনিধিরা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। পুরভোটের পরে কালনার পুরপ্রধান কে হবেন, তা নিয়ে কোন্দল চরমে উঠেছিল তৃণমূলের অন্দরে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বোর্ডের প্রথম বৈঠক বাতিল করতে হয়েছিল। পরের বৈঠকগুলি ছিল রীতিমতো উত্তপ্ত। পুর-প্রতিনিধিদের একাংশ পুরপ্রধান আনন্দ দত্তের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মহকুমাশাসকের কাছে। ঘটনাচক্রে, এই দুই পুরসভায় লোকসভা ভোটে বিজেপির থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে তৃণমূল। বেহাল পুর-পরিষেবাই এর কারণ বলে মনে করেন অনেকে।
কালনার এক তৃণমূল পুর-প্রতিনিধির কথায়, ‘‘পুরসভার কাজে মানুষ যে বিরক্ত, তা লোকসভা ভোটে বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষ। কালনা পুরসভা নিয়ে রিপোর্ট গিয়েছে রাজ্য নেতাদের কাছে। মনে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী কালনা নিয়ে মুখ খুলবেন। তা না হওয়ায় আমরা কিছুটা হলেও বিস্মিত।’’ আর এক পুর-প্রতিনিধি বলেন, ‘‘অনেক পুরসভার নামই মুখ্যমন্ত্রী করেননি। তার অর্থ এই নয় যে, তিনি কিছু জানেন না। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, কোনও কিছুই তাঁর নজর এড়ায় না। তাই এখনই সতর্ক হওয়া দরকার। না হলে যে কোনও মুহূর্তে পুরপ্রধানদের সরিয়ে দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ কালনার উপ-পুরপ্রধান তপন পোড়েল জানান, মুখ্যমন্ত্রী কড়া বার্তা দিয়েছেন। শহরে যানজট, বেআইনি দখলদারদের সরানো-সহ বেশ কিছু কাজে দ্রুত হাত দেওয়া হবে।
কালনা শহরের বাসিন্দাদের একাংশ মনে করেছিলেন, বেহাল পুর-পরিষেবার কথা বলে সরব হবেন মুখ্যমন্ত্রী। তা না হওয়ায় হতাশ তাঁরা। এক শহরবাসীর কথায়, ‘‘পুরসভায় গেলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার পর্যন্ত করা হয় না। উন্নয়নের কাজ বন্ধ। কেন মুখ্যমন্ত্রী কালনা নিয়ে কিছু বললেন না, তা বোঝা গেল না।’’
দাঁইহাট পুরসভার ১৪টি আসনের সবক’টি তৃণমূলের দখলে। পুর-প্রতিনিধিদের কোন্দলে সেখানেও থমকে রয়েছে উন্নয়নের কাজ। প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে পরপর চারটি পুরবোর্ডের বৈঠক বয়কট করেছেন ১১ জন পুর-প্রতিনিধি। এ দিন কলকাতা থেকে ফেরার পথে পুরপ্রধান প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আলাদা করে কিছু বলেননি। তিনি নাগরিক পরিষেবার মান বাড়াতে বলেছেন।’’