গাড়ি বিক্রি করতে চায় সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটি। — নিজস্ব চিত্র।
কমিউনিস্ট পার্টির সর্ব ক্ষণের কর্মী হয়েও ২২ লাখি গাড়ি চড়া নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষ। যদিও শতরূপ সাংবাদিক বৈঠকে রসিদ দেখিয়ে প্রকাশ্যে আনেন খরচের পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর নামে গাড়ি কেনা হলেও তার দাম মিটিয়েছেন বাবা শিবনাথ ঘোষ। একই অঙ্গে অবশ্য ভিন্নরূপ। এ বার উল্টো পথে হেঁটে দলের খরচে লাগাম পরাতে সেই শতরূপের দলেরই এক জেলা কমিটি গাড়ি বিক্রি করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাঠে-ময়দানে আন্দোলন করে দলের ইঞ্জিনে আগের মতো ‘গতি’র ঝড় তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে সিপিএম। এই আবহে সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটি স্থির করেছে, জেলা কার্যালয়ের ৬টি গাড়ি বিক্রি করে দেওয়া হবে।
সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কার্যালয়ে থাকা ৬টি চারচাকা গাড়ির মধ্যে ৩টি বড় এবং ৩টি ছোট গাড়ি রয়েছে। বর্তমানে যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। সেই গাড়িগুলিই বিক্রি করে দিতে চায় পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটি। সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলার একটি সূত্র মতে, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে দলে। কেউ দলবদল করেছেন। কেউ সদস্যপদ পুননর্বীকরণ করাননি। এর মধ্যেই ২০১৭ সালে জেলা ভাগ হয়ে যায় বর্ধমান জেলা। তার ফলে জোড়া কোপ পড়েছে দলের লেভি সংগ্রহেও। সেই সূত্রেই কমেছে দলের আয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক এক সর্বক্ষণের কর্মীর কথায়, গত কয়েক বছরে জেলা কার্যালয়ের খাবারের ভাঁড়ারেও টানা হয়েছে লাগাম। আগে সময়ে-অসময়ে পাতে থাকত এঁচোড়, পটল বা ফুলকপি। এখন তার পাট চুকেছে বলেই জানাচ্ছেন তিনি।
যদিও সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক সৈয়দ হোসেন এই তথ্য মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি লেভি আদায় সংক্রান্ত নয়। বহু কারণে গাড়িগুলি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনিতেই গাড়ি পুরনো হয়েছে। মেরামতির খরচও বেড়ে যাওয়ায় তা রাখা ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এত খরচ বহন করা দলের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই জেলা কমিটির তরফে গাড়িগুলি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। জোড়াফুল শিবিরের নেতা তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘তৃণমূল রাজ্যের এত বড় দল হয়েও কোনও সম্পত্তি নেই। কিন্তু সিপিএমের একটি জেলা কমিটির কাছে রয়েছে ৬টি গাড়ি। ৩৪ বছর রাজত্ব চালানোর পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে ‘বড় চোর কোম্পানি’র নাম সিপিএম। এদের আবার গাড়ি বিক্রি করে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে হচ্ছে। এটা জনগণকে বোকা বানানো ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু মাত্র সিপিএম জেলা কমিটির হাতে যা সম্পত্তি রয়েছে তাতে কয়েক পুরুষ চলে যাবে।’’
সিপিএমকে খোঁচা দিয়েছে বিজেপিও। পূর্ব বর্ধমানের গেরুয়াশিবিরের নেতা সুধীররঞ্জন সাউয়ের কথায়,‘‘সিপিএম বর্তমানে মানুষের থেকে বিছিন্ন। ওরা সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। মাঠে-ময়দানে লড়াইয়ে আছে বিজেপি। গাড়ি বিক্রির নাটক করে মানুষকে বোকা বানানো যাবে না।’’