মাদ্রা গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কল খারাপ। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের আর্সেনিক প্রবণ এলাকার মানচিত্রে রয়েছেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের মাদ্রা গ্রাম। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জলপ্রকল্পের একটি পাম্প বিকল হয়ে যাওয়ায় এলাকার বহু বাসিন্দা পরিস্রুত পানীয় জল পাচ্ছেন না বহুদিন ধরে। অভিযোগ, সমস্যার কথা প্রশাসনের কানে দেওয়া হলেও সুরাহা মেলেনি।
মাদ্রা গ্রামের একই পরিবারের ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল আর্সেনিকোসিসে। ওই পরিবারের এক সদস্য এখনও আর্সেনিক আক্রান্ত। ‘বিষ জল’ পানে গ্রামের একের পর এক বাসিন্দার মৃত্যুতে টনক নড়েছিল সরকারের। আড়াই দশক আগে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল মাদ্রা জলপ্রকল্প। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্পের একটি পাম্প দেড় মাস ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। গ্রামের একাংশ ও সংলগ্ন দু’টি গ্রামে পরিস্রুত পানীয় জল মিলছে না। জল কিনে খেতে হচ্ছে।
মাদ্রা প্রকল্পে দু’টি পাম্প রয়েছে সোনারুদ্র ও বলরামপুর গ্রামে। দিনে দু’টি পাম্প পালা করে এক ঘণ্টা করে চালানো হত। জল সরবরাহ করা হত মাদ্রা, সোনারুদ্র, পোলগ্রাম, শ্যামবাটী, পোলগ্রাম, বৈদ্যপুর, তেলিনপাড়ার মতো বেশ কিছু এলাকায়। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, একটি প্রকল্পের আওতায় এতগুলি গ্রাম থাকায় দূরের এলাকায় জল সরবরাহে সমস্যা হয়। কিছু এলাকায় জলের গতি কমে যায়। মাদ্রা গ্রামের পাম্পটি বিকল হওয়ায় শ্যামবাটী এবং বৈদ্যপুর গ্রামে জল সরবরাহ বন্ধ। মাদ্রা গ্রামের পালপাড়ায়ও জল যাচ্ছে না অভিযোগ বাসিন্দাদের।
মাদ্রা গ্রামের ধীরেন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘‘এক বছর ধরে ট্র্যাপ থেকে জল পড়ে না। জল কিনে খেতে হয়। বাসন ধোয়া ও বাড়ির বাকি কাজের জন্য জল তোলা হয় পাম্পের মাধ্যমে।’’ গ্রামের আর এক বাসিন্দা সন্ধ্যা ভৌমিক বলেন, ‘‘টিউবওয়েলের জল খাওয়ার অর্থ বিষ পান করা। প্রকল্পের জল না আসায় বাধ্য হয়ে ২০-২৫ টাকা দিয়ে পানীয় জলের জার কিনতে হচ্ছে। সমস্যার কথা নানা জায়গায় জানিয়েও লাভ হয়নি।’’
ওই জলপ্রকল্পের ভাল্ব অপারেটর স্বাধীন হাজরা বলেন, ‘‘একটি প্রকল্প থেকে প্রচুর সংযোগ দেওয়া রয়েছে। একটি পাম্প বিকল হয়ে যাওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সেটি দ্রুত সারানোর আর্জি জানানো হয়েছে।’’ আরও দু’টি পাম্প হলে সকলে ঠিকমতো পানীয় জল পাবেন বলে মনে করেন তিনি। দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সবিতা ঘোষের আশ্বাস, আজ, শুক্রবার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তাঁর মতে, একটি প্রকল্পে থেকে বেশ কয়েকটি গ্রামে জল পৌঁছে দিতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তেলিনপাড়া, মাদ্রা, শ্যামবাটীর জন্য পৃথক প্রকল্প হলে সমস্যা মিটবে।
পূর্বস্থলীর উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই এলাকাগুলিতে পরিস্রুত জল পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে সমস্যা জানানোর জন্য ড্রপ বক্স রাখা হয়েছে। দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের কোন গ্রামে কী সমস্যা হচ্ছে, তা লিখে মন্ত্রীর নজরে আনা হবে।’’ তাঁর দাবি, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রকল্পের জলে গবাদি পশু স্নান করানো, গাড়ি ধোয়া-সহ বিভিন্ন কাজ করেন অনেকে। একই বাড়িতে একাধিক সংযোগ নেওয়ার প্রবণতাও লক্ষ্য করা গিয়েছে। এ নিয়ে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।