প্রতীকী ছবি।
এক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, জানিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তাঁকে জামুড়িয়ার চিচুড়িয়া পঞ্চায়েতের বাগডিহার এক পাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছেও দেওয়া হয়। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর বিক্ষোভের জেরে ওই ব্যক্তিকে ফের হাসপাতালের নিভৃতবাসে নিয়ে যেতে হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জন-সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহারাষ্ট্রের থানে থেকে পেশায় ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তি তাঁর শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলেন। গত ২১ মে স্বাস্থ্যপরীক্ষার রিপোর্টে তাঁকে ‘কোভিড পজ়িটিভ’ বলে জানায় প্রশাসন। এর পরে তাঁকে কাঁকসায় ‘কোভিড হাসপাতালে’ রেখে চিকিৎসা করানো হয়। তাঁর স্ত্রী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে আসানসোলের ইএসআই হাসপাতালে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ, পশ্চিম বর্ধমান) দেবাশিস হালদার বলেন, ‘‘প্রয়োজনীয় চিকিৎসার পরে, ওই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠেছেন।’’
ব্লক প্রশাসন (জামুড়িয়া) জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিকে সোমবার শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। অভিযোগ, এর পরেই গ্রামবাসীর একাংশ ওই বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। দাবি জানান, তাঁকে থাকতে দেওয়া হবে না। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে ফের আসানসোলে ইএসআই হাসপাতালের নিভৃতবাসে আলাদা ‘কেবিন’-এ রাখা হয় বলে প্রশাসন জানিয়েছে।
কিন্তু কেন এই ঘটনা? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্ষোভকারী বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করেন, এই গ্রাম মূলত চাষাবাদের উপরে নির্ভরশীল। এলাকার চাষিরা নানা হাটে আনাজ বিক্রি করেন। কিন্তু গ্রামে করোনা-সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আসার পরে অনেক ক্রেতা তাঁদের কাছ থেকে আনাজ কিনতে চাইছেন না বলে অভিযোগ চাষিদের একাংশের। তাঁদের আরও দাবি, প্রশাসন একসময়ে জানিয়েছিল, করোনা-রোগী সুস্থ হওয়ার পরেও তাঁকে ১৪ দিন হাসপাতালে রাখা হবে। অথচ, এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের খবর আসার পাঁচ দিনের মাথায় সোমবার ওই ব্যক্তিকে এলাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী ‘বিভ্রান্ত’ বলে দাবি।
যদিও জেলা স্বাস্থ্য দফতর এই দাবি অস্বীকার করেছে। দফতরের এক কর্তা জানান, সুস্থ রোগীকে ১৪ দিন হাসপাতালে রাখার কোনও কথা বলা হয়নি। সুস্থ হয়ে গেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বাড়ি ফেরাতে হয়। যদিও তাঁর দিকে স্বাস্থ্য দফতর নজরদারি করে।
তবে চিচুড়িয়া পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান তথা স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ শীল বলেন, ‘‘সচেতনতার অভাবেই এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের উচিত, কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার আগে সেই এলাকায় সচেতনতা শিবির করা, সেই এলাকাকে জীবাণুমুক্ত ঘোষণা করা। তেমনটা করা হলে এমন ঘটনা ঘটবে না।’’ তবে বিডিও (জামুড়িয়া) কৃশাণু রায় বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সচেতনতা প্রচার হয়েছে, এখনও হচ্ছে। প্রয়োজনে শিবিরও আয়োজিত হবে।’’