প্রতাপপুরে নেতার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগে এ বার তপ্ত হল পশ্চিম বর্ধমানের রাজনীতি। আইএনটিটিইউসি থেকে বিএমএসে যোগ দেওয়ার পরেই অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের (এএসপি) এক নেতার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ তুললেন তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো টাকা ফেরত দিতে বলার পরেই ওই নেতা রাজনৈতিক শিবির পাল্টেছেন বলে দাবি তাঁদের। রবিবারই আবার ফরিদপুরের (লাউদোহা) প্রতাপপুর গ্রামে এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান কিছু বাসিন্দা।
এএসপি-র নেতা অশোক কুণ্ডু আইএনটিটিইউসি ছেড়ে বিএমএসে যোগ দেওয়ার পরেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির অভিযোগ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী অসৎ উদ্দেশ্যে নেওয়া টাকা ফেরতের নির্দেশ দেওয়ার পরেই অশোকবাবুকে চাকরি দেওয়ার নামে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। কিন্তু তিনি তা না করে বিজেপিতে যোগ দেন। টাকা ফেরত না দিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আইএনটিটিইউসি সূত্রে জানা গিয়েছে, এএসপি-তে সংগঠনের কাজ আগে দেখাশোনা করতেন প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। অশোকবাবু সম্পাদক হওয়ার পরে কারখানায় বিভিন্ন সময়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৮ সালে সমবায় সমিতির নির্বাচনেও দু’টি গোষ্ঠী পৃথক মনোনয়ন দাখিল করে। শনিবার অশোকবাবু কিছু অনুগামীকে নিয়ে বিএমএসে যোগ দিয়ে দাবি করেন, আইএনটিটিইউসি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই সিদ্ধান্ত। চাকরির নামে টাকা আদায়ের অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘মানুষ তৃণমূল নেতাদের বিশ্বাস করেন না। আমি ওঁদের অভিযোগের জবাব আইনগত ভাবে দেব।’’
এ দিন সকালে প্রতাপপুর গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ স্থানীয় তৃণমূল নেতা রবিলাল মণ্ডলের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, গীতাঞ্জলি প্রকল্পের বাড়ি তৈরির জন্য তাঁদের নামে আসা ৪৫ হাজার টাকা থেকে ওই নেতা ৫ হাজার টাকা কেটে নিয়ে ৪০ হাজার টাকা করে দেন। স্থানীয় বাসিন্দা ভোম্বল বাদ্যকর, গন্ধেশ্বরী বাদ্যকরদের অভিযোগ, ‘‘রবিলাল মণ্ডল বাড়ি তৈরির জন্য আমাদের নামে বরাদ্দ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা করে কেটে নেন। অনেকে বাড়ির কাজ শেষ করতে পারেননি টাকার অভাবে।’’ টাকা ফেরতের দাবিতে এ দিন স্লোগান দেন তাঁরা। এ দিন রবিলালবাবুর বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ আসে।
যদিও বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা অশোককুমার গোস্বামী। তাঁর দাবি, ‘‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে।’’ দলের ব্লক নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য সুজিত মুখোপাধ্যায়েরও বক্তব্য, ‘‘সত্যি তেমন কোনও ঘটনা ঘটে থাকলে তো সরকার যে নম্বর চালু করেছে, সেখানে অভিযোগ জানাতে পারতেন বাসিন্দারা। তা না করে এই বিক্ষোভ বিজেপির চক্রান্ত বলে আমরা মনে করছি।’’ দুর্গাপুরের বিজেপি নেতা অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘মানুষের ক্ষোভ এখন সামনে আসছে। যেখানে অভিযোগ করার, তা-ও নিশ্চয় করবেন বাসিন্দারা।’’