নরসমুদা কোলিয়ারিতে খনিতে নামছেন শ্রমিকেরা। নিজস্ব চিত্র।
পাঁচ মাস পরে ফের কয়লা উত্তোলন শুরু হল ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার নরসমুদা কোলিয়ারিতে। খনিগর্ভে বৃষ্টির জল ঢুকে যাওয়ায় শ্রমিক নিরাপত্তার কারণেই কয়লা উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
গত ১৭ জুন প্রবল বৃষ্টির কারণে ভূগর্ভস্থ নরসমুদা কোলিয়ারিতে জল ঢোকে। সে দিন থেকেই শ্রমিকদের খনিগর্ভে নেমে কয়লা তোলার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। খনি বিশেষজ্ঞেরাও ভূগর্ভস্থ খনিতে জমে থাকা জল পুরোপুরি বার করার পরেই খনি চালুর পরামর্শ দিয়েছিলেন। খনির জেনারেল ম্যানেজার নন্দদুলাল সিংহ বলেন, “জল বার করা হয়েছে। খনি এখন নিরাপদ। তাই চলতি সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু হয়েছে।”
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে খনির কাজ শুরু করা হলেও, চলতি সপ্তাহ থেকে কয়লা উত্তোলনের জন্য শ্রমিকদের খনিগর্ভে নামানো হয়েছে। যদিও ভয় এখনও পুরোপুরি কাটেনি বলে জানিয়েছেন সাধারণ শ্রমিকেরা। কোলিয়ারিতে গিয়ে দেখা গেল, শ্রমিকদের অভয় দিতে স্বয়ং জেনারেল ম্যানেজার নন্দদুলাল খনিগর্ভে প্রবেশ করে কাজের তদারকি করছেন। তবে এর পরেও, পরিস্থিতি নিয়ে এখনই পুরোপুরি শঙ্কা-মুক্ত হতে পারছেন না শ্রমিক নেতৃত্ব। নরসমুদা কোলিয়ারির কর্মী তথা এআইটিইউসি নেতা বিজয় মণ্ডল বলেন, “কাজ শুরু হলেও, পাঁচ মাস আগের পরিস্থিতির বিচার করে, এখনও ভয় পাচ্ছি।” সিটু নেতা তথা ওই খনিকর্মী উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাজ চালু হওয়ায় আমরা খুশি। তবে এ ধরনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাইছি।” একই কথা বলেন আইএনটিটিইউসি নেতা প্রকাশ নোনিয়াও। যদিও এই মুহূর্তে বিপদের কোনও সম্ভাবনা নেই বলেই দাবি নন্দদুলালের। তিনি জানান, খনিগর্ভ থেকে জল তোলার জন্য এখনও তিনটি শক্তিশালী পাম্প বসানো রয়েছে। এই মুহূর্তে প্রতি দিন তিনটি পালিতে (শিফ্ট) প্রায় ১০০ টন কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। আগামী দু’-তিন মাসের মধ্যে উত্তোলনের মাত্রা তিন গুণ বেড়ে পুরনো ছন্দে ফিরবে কোলিয়ারি, আশা খনিকর্তাদের। খনি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে ৫২০ জন কর্মী ও আধিকারিক রয়েছেন এখানে। খনিগর্ভে প্রায় এক লক্ষ টন কয়লা মজুত আছে।
খনিকর্তারা জানান, এই খনি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে একাধিক অবৈধ কয়লাখনি রয়েছে। সেগুলির সুড়ঙ্গ-পথ নরসমুদা খনির সুড়ঙ্গ-পথের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। ১৭ জুন প্রবল বৃষ্টির কারণে অবৈধ খনির সুড়ঙ্গ-পথ দিয়ে বৃষ্টির জল নরসমুদা খনিতে ঢুকে যায়। ওই অবৈধ খনিগুলি বালি, পাথর ও মাটি দিয়ে ভরাট করে দেওয়া হয়েছে বলে ইসিএল কর্তৃপক্ষ জানান। পাশাপাশি, জমির মালিকদের বিরুদ্ধে অবৈধ খাদান চালানোর অভিযোগ তুলে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।