আরও চাপে সুরোজ, তারকেশ্বর

পুলিশে অভিযোগ অধ্যক্ষের

তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে সেই ইঙ্গিত পাওয়ার পরেই রাজ কলেজের অধ্যক্ষ নিরঞ্জন মণ্ডল বুধবার রাতে পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুরোজ ঘোষ-সহ তিন জন টিএমসিপি সদস্য এবং কলেজের পার্ক্তন টিচার-ইন-চার্জ তারকেশ্বর মণ্ডলের নামে অভিযোগ করেন।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:১৭
Share:

রাজ কলেজের অধ্যক্ষ-সহ শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পরিচালিত ছাত্র সংসদের অশালীন আচরণকে ‘ভাল চোখে’ দেখছে না রাজ্যের শাসকদল। বর্ধমান রাজ কলেজের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে বুধবার তৃণমূলের রাজ্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হয় জেলা নেতৃত্বের। সেখানে ঠিক হয়েছে, রাজ কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করে সরকারের ‘বদনাম’ করার চেষ্টা করছেন যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে দল ও প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

Advertisement

তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের কাছ থেকে সেই ইঙ্গিত পাওয়ার পরেই রাজ কলেজের অধ্যক্ষ নিরঞ্জন মণ্ডল বুধবার রাতে পুলিশ সুপারের কাছে চিঠি পাঠিয়ে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুরোজ ঘোষ-সহ তিন জন টিএমসিপি সদস্য এবং কলেজের প্রাক্তন টিচার-ইন-চার্জ তারকেশ্বর মণ্ডলের নামে অভিযোগ করেন। তারকেশ্বরবাবুর উস্কানিতেই ছাত্র সংসদ কলেজে হুজ্জুতি বাধাচ্ছে বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ করেছে এসেছেন অধ্যক্ষ। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “রাজ কলেজের চিঠি আমরা রাতে পেয়েছি। ওই চিঠি পাওয়ার পরেই বর্ধমান থানাকে এফআইআর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখছি।” যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন অভিযুক্তেরা।। কিন্তু, একে দল বিপক্ষে, তার উপরে এফআইআর—দুইয়ের জেরে সুরোজ ও তারকেশ্বরবাবু আরও চাপে পড়বেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার একগুচ্ছ দাবি নিয়ে অধ্যক্ষকে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিল ছাত্র সংসদ। অভিযোগ, সুরোজের নেতৃত্বে তিরিশ জন মিলে অধ্যক্ষকে হেনস্থা করেন। অপমান করা হয় কলেজের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকেও। বৃহস্পতিবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ‘বিজ্ঞান কংগ্রেসে’র উদ্বোধন করতে এসেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথ। সংস্কৃতি লোকমঞ্চে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের ফাঁকে স্বপনবাবু রাজ কলেজের পরিস্থিতি নিয়ে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবকে কঠোর ভূমিকা নিতে বলেন। জেলাশাসক ওই কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি। স্বপনবাবু বলেন, “ছাত্র সংসদের নানা দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। তা বলে তারা অধ্যক্ষের সঙ্গে অভব্য আচরণ করবে? শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য আমরা মানব না। সে জন্য জেলাশাসককে বলেছি পরিচালন সমিতির বৈঠক ডেকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে।”

Advertisement

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দিনই কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন স্বপনবাবু। অধ্যক্ষকে তিনি সরকারের নির্দেশ মতো কলেজ চালানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রের জন্য পিছিয়ে যাবেন না। কলেজের সুনাম নষ্ট ও সরকারের বদনাম করার চেষ্টাকে আমরা ভালভাবে দেখছি না।’’

তৃণমূল সূত্রেই আরও জানা যাচ্ছে, বুধবার তৃণমূলের তরফে জেলার পর্যবেক্ষক তথা মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস রাজ কলেজ নিয়ে জেলা নেতৃত্বের কাছে খোঁজ-খবর নেন। তিনি জেলা নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। স্বপনবাবু বলেন, “অরূপবাবুর নির্দেশ নিয়ে জেলাস্তরে আলোচনা করেছি। আমরা একটা কমিটি গঠন করে, অধ্যক্ষ-হেনস্থায় কারা জড়িত, কাদের মদত রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছি। ওই রিপোর্ট আসার পরেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অধ্যক্ষ নিরঞ্জনবাবুর অভিযোগ, কয়েক মাস আগে কলেজের পরীক্ষা-ব্যবস্থায় ‘হস্তক্ষেপ’ করার জন্য সুরোজের বিরুদ্ধে তিনি এফআইআর করেছিলেন। সেই এফআইআর তোলার জন্য বেশ কিছু বহিরাগতদের নিয়ে এসে ‘চাপ’ দিচ্ছিলেন সুরোজরা। ওই সব ছাত্রকে পিছন থেকে মদত দিয়েছেন কলেজেরই শিক্ষক তারকেশ্বর মণ্ডল। সে জন্য ওই পড়ুয়ারা শুধু তাঁকেই হেনস্থা নয়, কলেজে ‘ভয়ের’ পরিবেশ তৈরি করেছিল বলে অধ্যক্ষের দাবি। বাধ্য হয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা জেলাশাসকের নির্দেশ মতো মহকুমাশাসকের (বর্ধমান উত্তর) কাছে গিয়েছিলেন।

সুরোজের যদিও দাবি, “আমাদের নামে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া, আমাদের ছাত্র সংসদ কোনও শিক্ষকের মদতেও চলে না।” তারকেশ্বরবাবুর বক্তব্য, “আমার কথায় ছাত্র চলবে, এ আবার হয় নাকি? ছাত্রদের দাবিগুলি খতিয়ে না দেখে খামোকা আমার ঘাড়ে দোষ চাপানো হচ্ছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement