আলু খেত থেকে বৃষ্টির জমা জল বার করছেন চাষি। কালনার শিংরাইলে। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
নিম্নচাপ শুরু হতেই খুচরো বাজারে দাম বাড়তে শুরু করেছে আলুর। গত দু’দিনেই আলুর দাম প্রতি কেজিতে তিন-চার টাকা বেড়ে গিয়েছে। বুধবার থেকে টানা বৃষ্টির জেরে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে আলুর জমিতেও। যে সব জমিতে আলুবীজ পোঁতা হয়নি, সেখানে আলু চাষ নিশ্চিত ভাবে অন্তত ১০ দিন পিছিয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষি কর্তারা। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চাষিরাও। তাঁদের আশঙ্কা, দু’বছর আগে এ রকম নিম্নচাপের জেরে দু’বার করে আলু চাষ করতে হয়েছিল। চাষের খরচ বেড়ে গিয়েছিল। এ বারও না সেই পরিস্থিতি হয়।
তবে কৃষি কর্তাদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত বৃষ্টি না হলে চাষিদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বৃষ্টি হয়নি। খেত জমিতে জলের টান রয়েছে। বৃষ্টি থেমে গেলেই খেতে দাঁড়ানো জল শুকিয়ে যাবে। তবে নিকাশি ব্যবস্থা খারাপ থাকলে কিছু জমিতে সমস্যা হতে পারে, দাবি তাঁদের। ২০২১ সালের মতো পরিস্থিতি এখনই নয়, স্পষ্ট জানাচ্ছেন তাঁরা। কৃষি বিশেষজ্ঞদের দাবি, জলদি আলু বা দু’সপ্তাহ আগে যে সব জমিতে আলু লাগানো হয়েছে, সেই গাছে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নকুলচন্দ্র মাইতি বলেন, “জমি ভিজে থাকায় আলু চাষ কয়েক দিন পিছোতে পারে। চাষিদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”
এ বছর জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৬৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ৯,৪০০ হেক্টর জমিতে জলদি আলু (পোখরাজ, এস১) চাষ হয়েছে। ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে জ্যোতি আর আড়াই হেক্টর জমিতে চন্দ্রমুখী, হিমালিনি প্রজাতি আলুর বীজ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। প্রস্তুত করা হয়েছে ১৯ হাজার হেক্টর জমি। কৃষি দফতরের দাবি, প্রস্তুত করা জমি ভিজে থাকায় আলু বসাতে দেরি হবে। তবে কৃষি দফতর যাই বলুক, চাষিদের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলছে।
মেমারি ২ ব্লকের স্বপন মল্লিক, কালনা ১ ব্লকের চাষি খোকন মল্লিকের দাবি, “জমিতে এত জল জমে আছে, বার করা সম্ভব নয়। এত খরচ করে আলু চাষ করা হয়েছে, সব নষ্ট হয়ে যাবে। দ্বিতীয় বার আলু বীজ বসানোর ক্ষমতা সব চাষির নেই।” শক্তিগড়ের বড়শুলের কাশেম আলি, রায়নার মানিক মণ্ডলদের কথায়, “২০২১ সালেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। দু’বার করে চাষ করতে হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জেরে ক্ষতির মুখে পড়েছিলাম। কিন্তু পর্যাপ্ত বিমার ক্ষতিপূরণ পায়নি। সেই ঘা এখনও রয়েছে। আবার একই ক্ষতি হলে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াব, জানি না।”
এ দিকে, বৃষ্টি শুরু হতেই খুচরো বাজারে আলুর দাম ১৮ থেকে একলাফে কোথাও ২১, কোথাও ২২ টাকা হয়েছে। খুচরো ব্যবসায়ীদের দাবি, সংরক্ষণকারীরা আলু হিমঘর থেকে বার করতে চাইছেন না। সবাই ভাবছেন দাম বাড়বে, ফলে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করা হচ্ছে। এক খুচরো ব্যবসায়ীর দাবি, “যেখানে প্রতিদিন হিমঘর থেকে ৫০০ বস্তা আলু বার হওয়ার কথা, সেখানে ১৫০ বস্তা বার করা হচ্ছে। ফলে জোগানে ঘাটতি হচ্ছে। তাতে দাম বাড়ছে।”
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা যায়, ১১ লক্ষ ৩০ হাজার ৯৪৮ টন বা ২ কোটি ২৬ লক্ষ ১৮ হাজার ৯৬০ বস্তা (৫০ কেজির বস্তা) আলু হিমঘরে মজুত ছিল। বুধবার পর্যন্ত ৯০ শতাংশ আলু হিমঘরের বাইরে এসেছে।
সংরক্ষণকারীদের একাংশের দাবি, বীজের জন্য তিন শতাংশ আলু আটকে থাকবে। নতুন আলু আসতে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ হয়ে যাবে। ফলে টান পড়ার সম্ভাবনা থাকছে। সেই কারণেই বৃষ্টি শুরু হতেই আলুর প্যাকেটের পাইকারি দাম বেড়ে ৭৭০ থেকে ৮১০ টাকায় ঘুরছে। নতুন আলু বাজারে না আসা পর্যন্ত দাম চড়বে, অনুমান তাঁদের।