প্রতীকী চিত্র
অন্তত চারটি হাসপাতাল, নার্সিংহোম ফিরিয়েছে অসুস্থ অন্তঃসত্ত্বাকে। কোথাও বলা হয়েছে, ‘শয্যা নেই’, কোথাও ‘ডাক্তার নেই’, কোথাও মিলেছে পরামর্শ, ‘ভাল হাসপাতালে নিয়ে যান’। শেষে জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতীর উদ্যোগে প্রায় সাত মাসের ওই অন্তঃসত্ত্বাকে ভর্তি করানো হয় বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যু হয় মেমারির শঙ্করপুরের সৌমি ঘোষের (২৬)। বাঁচানো যায়নি তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকেও। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, ডায়াবিটিসজনিত কারণে অসুস্থ হন সৌমি।
মৃতার বাবা প্রণবকুমার ঘোষ মেমারি থানায় সোমবার একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বর্ধমান মেডিক্যাল এবং কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের গাফিলতিতে সৌমির মৃত্যু হয়েছে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে গাফিলতিতে মৃত্যুর ধারায় মামলা (৩০৪-এ) রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। সিএমওএইচ (পূর্ব বর্ধমান) প্রণব রায় মঙ্গলবার রাতে বলেন, ‘‘এ ধরনের অভিযোগ পেয়েছি বলে মনে পড়ছে না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
সৌমির স্বামী এনডিআরএফের জওয়ান। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের গুণ্টুরে কর্মরত। পরিবারের দাবি, ১০ সেপ্টেম্বর সকালে সৌমিকে মেমারির একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা করে, তাঁকে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। সৌমি ও তাঁর গর্ভস্থ সন্তান ‘ঠিক আছে’ জানিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে রাতে বুকে যন্ত্রণা শুরু হলে তাঁকে ফের ওই নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার ইঞ্জেকশন দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে অন্তঃসত্ত্বার শরীর ফের খারাপ হয়। তখন তাঁকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেইমতো বর্ধমানের বামবটতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অক্সিজেন দেওয়ার পরে, বর্ধমান মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সৌমির বাবা প্রণববাবু রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন কর্মী। তাঁর দাবি, ‘‘বর্ধমান মেডিক্যালে এক জুনিয়ার ডাক্তার আমাদের বললেন, ‘ভাল হাসপাতালে নিয়ে যান’। কোন হাসপাতালে যেতে হবে, তা-ও বলে দিলেন। শুনে, বিশ্বাস করতে পারিনি। কিন্তু মেয়ের অবস্থা দেখে বাধ্য হয়ে নিয়ে যাই।’’ আত্মীয়দের দাবি, সে সময় সৌমিকে বামবটতলার ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ‘শয্যা নেই’ বলে জানানো হয়। বর্ধমান শহরে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে ‘ডাক্তার নেই’ বলে জানানো হয়। ঘোড়দৌড়চটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে, ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
‘নাজেহাল’ পরিবারের তরফে তখন এনআরডিএফের এক আধিকারিককে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানান। জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে সৌমিকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সেখানে কিছুক্ষণের মধ্যেই (১১ সেপ্টেম্বর সকালে) মারা যান তিনি। মৃতার বাবার দাবি, ‘‘আমরা যে ভাবে হয়রান হয়ে সন্তান হারালাম, তা যেন আর কারও না হয়। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার কুণালকান্তি দে জানান, প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, রোগিণীর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তবে তাঁর দাবি, ‘‘এখান থেকে ওই মহিলার পরিবারকে কেউ বলেনি, ‘ভাল হাসপাতালে নিয়ে যান’। ওঁরা যে এখানে আগে এসেছিলেন, সে তথ্যই আমাদের কাছে নেই। তবে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেখানে সব তথ্য উঠে আসবে।’’