বিদ্যুৎ বিপর্যয় সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ জানানোর তৎক্ষণাৎ উপায় টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ফোন করার পরেও বেশির ভাগ সময়েই মোবাইল ভ্যান আসে না, বা এলেও ততক্ষণে রাত কাবার হয়ে দিনের আলো ফুটে যায়— কালনা মহকুমা জুড়ে গ্রাহকদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তাঁদের দাবি, ঝড়বৃষ্টিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে বারবার ফোন করে জানানোর পরেও কারও টিকি দেখা যায় না।
কালনা মহকুমার পাঁচ ব্লকেই বিদ্যুৎ দফতরের একাধিক গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র রয়েছে। বছর চারেক আগেও গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ ফোন করে বা সরাসরি এখানে এসে গ্রাহকেরা জানাতে পারতেন। তখনও অবশ্য ফোনে না পাওয়ার অভিযোগ ছিলই। পরে সমস্যা মেটাতে টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে সরাসরি অভিযোগ জানানোর নিয়ম চালু হয়। নিয়ম অনুযায়ী, জেলা সদরে থাকা পরিষেবা কেন্দ্র গ্রাহকের ফোন ধরে উপভোক্তা নম্বর জেনে নিয়ে অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে। সঙ্গেসঙ্গে একটি অভিযোগ নম্বরও দিয়ে দেওয়া হয়। এরপরে যে এলাকার সমস্যা সেখানকার গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে তা জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই কেন্দ্র মোবাইল ভ্যানকে জানিয়ে দেয়, কোথায় গিয়ে কী সমস্যা মেটাতে হবে। মোবাইল ভ্যানেই উঁচু মই-সহ নানা প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ থাকে। যা নিয়ে কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা মহকুমার যে কোনও জায়গায় পৌছনোর জন্য তৈরি থাকেন। যদিও গ্রাহকদের অভিযোগ, টোল ফ্রি নম্বরে সমস্যা জানাতে গেলে দীর্ঘক্ষণ চেষ্টা করতে হয়। কখনও কখনও ফোন ধরার পরেও সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিকে দেওয়া হচ্ছে বলে আটকে রাখা হয়। ঝড়বৃষ্টির রাতে সমস্যা বাড়ে বলেও তাঁদের দাবি। নাদনঘাটের বাসিন্দা ফজল শেখের অভিযোগ, ‘‘ঝড়বৃষ্টির রাতে কল সেন্টারে ফোন পাওয়ার চেষ্টা করতে করতে আঙুল ব্যাথা হয়ে যায়। এমনকী রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেলেও বহু সময় ফোন যায় না।’’ পূর্বস্থলী সমুদ্রগড় পঞ্চায়েতের বসিন্দা রাজীব বসাকও বলেন, ‘‘আগে ফোনে না পাওয়া গেলেও সরাসরি কেন্দ্রে গিয়ে অভিযোগ জানানো যেত। এখন সে সুযোগও নেই। জেলা সদরের কল সেন্টারে ফোন না গেলে সমস্যা মিটবে না। অথচ বেশির ভাগ সময় সেখানে ফোনেই পাওয়া যায় না।’’ গ্রাহকদের আরও অভিযোগ, চাহিদার তুলনায় গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের সংখ্যা বেশ কম। আরও কম মোবাইল ভ্যানের সংখ্যা। তাঁদের দাবি, শহরে থাকা দুটি মোবাইল ভ্যান কিছুটা ভাল পরিষেবা দিলেও গ্রামাঞ্চলে এই পরিষেবা পেতে লাগে দীর্ঘ সময়। বহু ক্ষেত্রেই প্রাকৃতিক দুর্যোগে তার ছেঁড়া, খুঁটি উপড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে রাতের সমস্যা মেটে পরের দিন সকালে। মোবাইল ভ্যানের সমস্যা ধাত্রীগ্রাম, নাদনঘাট এবং পূর্বস্থলী এলাকায় বেশি বলেও তাঁদের দাবি। নাদনঘাটের বাসিন্দাদের দাবী, তাঁদের এলাকায় মোবাইল ভ্যান পরিষেবা মেলে সন্ধ্যা ছটা পর্যন্ত। এর পর কোন সমস্যা হলে তা পরের দিন মেটানো হয়।
বিদ্যুৎ দফতরের কালনা ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমায় মোট ১৬টি মোবাইল ভ্যান রয়েছে। যার মধ্যে ৯টি মোবাইল ভ্যান বাড়ি অথবা এলাকার সমস্যা মেটানোর কাজ করে। বাকি সাতটি মূলত ১১ হাজার ভোল্টের লাইন-সহ বড় সমস্যা সমাধানে কাজ করে। বিদ্যুৎ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘সব গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রেই লোকসানে চলছে। কালনা মহকুমায় দফতরের লোকসানের গড় যেখানে ৫৫ শতাংশ সেখানে কালনা শহরে লোকসান হয় ১২ শতাংশ। ফলে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহর কিছুটা ভাল পরিষেবা পায়। রাত দিন শহরে দুটি মোবাইল ভ্যান পরিষেবা দেয়।’’ ওই আধিকারিকের দাবি, গ্রাহকের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। টোল ফ্রি নম্বরে ফোন ধরার লোক না বাড়ালে সমস্যা মিটবে না।
তবে টোল ফ্রি নম্বরে ফোন পেতে সারাবছর গ্রাহকদের সমস্যার কথা মানতে নারাজ কালনা ডিভিশনের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার চঞ্চল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সহ কিছু কারণে বিএসএনএল পরিষেবা ঠিকঠাক না মেলায় কোনও কোনও সময় সমস্যা হতে পারে। তবে সব সময় ফোন পেতে সমস্যা হয় এমন অভিযোগ ঠিক নয়।’’ তবে প্রয়োজনের তুলনায় মোবাইল ভ্যানের সংখ্যা যে মহকুমায় কম, তা স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।’’