—ফাইল চিত্র।
স্কুলের পড়ুয়াদের মধ্যে ফের এক দফা মিড-ডে মিলের চাল-আলু দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে সরকার। সোমবার থেকে টানা চার দিন অভিভাবকদের হাতে চাল-আলু তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ‘লকডাউন’-এর পরিস্থিতিতে কী ভাবে বাইরে থেকে স্কুলে গিয়ে এই কাজ করবেন, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ।
কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, পূর্ব বর্ধমান জেলার নানা বাজারে আলুর দাম বেড়ে গিয়েছে। এক লপ্তে বেশি আলু কেনা যাবে কি না, সে নিয়েও সংশয়ে তাঁরা। যদিও এই সব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা হবে বলে আশ্বাস প্রশাসনের।
‘পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক’ সুনীল ঘোষ বলেন, ‘‘বাজার চড়া থাকলেও মিড-ডে মিলের আলু জোগাড় করা নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। হিমঘরগুলি খুলতে শুরু করেছে। দু’-এক দিনের মধ্যে আলুর দাম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’ জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘পাইকারি বাজারে আলুর দাম কেজি প্রতি ১৩-১৪ টাকা, আর খুচরো বাজারে সর্বাধিক কেজি প্রতি ১৮ টাকা থাকবে। তার বেশি দামে বিক্রি হলে টাস্ক ফোর্স ব্যবস্থা নেবে।’’ যে সব শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা স্কুলে চাল-আলু বিলি করতে যাবেন, তাঁদের জন্য বিশেষ অনুমতিপত্র দেওয়া হবে বলে জানান জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শ্রীধর প্রামাণিক।
জেলার স্কুল-তথ্য
• প্রাথমিক: ৩৮৫৬টি।
• প্রাথমিকে পড়ুয়া: ৪,০৭,২৪০।
• উচ্চ প্রাথমিক: ৮৫৩টি।
• উচ্চ প্রাথমিকে পড়ুয়া: ১,৭১,৯৬৩।
• এনসিএলপি: ২২টি।
• এনসিএলপি পড়ুয়া: ১০৫২।
যে ভাবে বিতরণ
• বৃহস্পতিবার প্রশাসনের কাছে জমা পড়েছে মিড-ডে মিল বিলিতে নিযুক্তদের নাম।
• আজ, শুক্রবার স্কুল সাফাই।
• শনিবারের মধ্যে খবর দিতে হবে সব অভিভাবককে।
• রবিবার স্কুলে চাল-আলু প্যাকেটে ভরার কাজ।
• সোমবার থেকে এক-একটি ক্লাসের পড়ুয়াদের অভিভাবকদের হাতে প্যাকেট দেওয়ার কাজ।
বুধবার জেলার দুই পরিদর্শক (মাধ্যমিক ও প্রাথমিক) যৌথ ভাবে নির্দেশিকায় প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকা বা স্কুল কর্তৃপক্ষদের কী করণীয়, তা জানিয়েছেন। এর আগে ২৪ মার্চ পড়ুয়া পিছু দু’কেজি করে চাল ও আলু দেওয়া হয়েছিল। স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ১০ জুন পর্যন্ত স্কুলগুলি বন্ধ থাকছে। তাই এ বার পরিমাণ বাড়িয়ে তিন কেজি করে চাল ও আলু দিতে বলা হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষকেই আলু কিনতে বলা হয়েছে। সরকারি নির্দেশ পেয়ে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ ইতিমধ্যে আলু কিনতে নেমেছেন। কোনও কোনও স্কুল সরাসরি হিমঘর থেকে আলু কিনতে চাইছে। মেমারির এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আমাদের ৩২ কুইন্টাল আলু দরকার। এলাকায় প্রচুর হিমঘর। সেখান থেকে কিনলে বাজারের চেয়ে অনেক কমে পাব।’’
সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবারের মধ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য, কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুলে আসবেন, তাঁদের নামের তালিকা মহকুমাশাসক বা ব্লক দফতরে পাঠিয়েছেন প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আজ, শুক্রবার স্কুলগুলি পরিষ্কার করতে হবে। কাল, শনিবারের মধ্যে সমস্ত অভিভাবককে চাল-আলু দেওয়ার কথা জানাতে হবে। রবিবার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে চাল-আলু প্যাকেটে ভরতে হবে। সোমবার থেকে এক-একটি ক্লাসের পড়ুয়ার অভিভাবকদের হাতে প্যাকেট তুলে দিতে হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, পর্যাপ্ত ‘মাস্ক’, ‘স্যানিটাইজ়ার’ রাখতে বলা হয়েছে। সে জন্য ‘কম্পোজ়িট স্কুল গ্র্যান্ট’ ব্যবহার করতে বলেছেন প্রশাসনের কর্তারা।
তৃণমূল প্রভাবিত ‘মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র প্রাক্তন সভাপতি রথীন মল্লিক দাবি করেন, ‘‘লকডাউনের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। গ্রামীণ এলাকার শিক্ষকদের সমস্যা হবে।’’ ওই সংগঠনেরই প্রাথমিক স্তরের জেলা সভাপতি তপন পোড়েল অবশ্য বলেন, ‘‘মোটরবাইক রয়েছে, স্কুলের কাছে থাকেন— এমন শিক্ষকদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।’’ বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি রাধাকান্ত রায়ের বক্তব্য, ‘‘দু’মাস ধরে শিক্ষকেরা বাড়িতেই রয়েছেন। পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ তাঁরা আগ্রহের সঙ্গেই করবেন।’’