প্রতীকী ছবি।
বড় ছেলেটাকে বললে বোঝে। কিন্তু ছোট ছেলে! দু’দিন আগেই গলা জড়িয়ে ধরে জানতে চেয়েছে, পুজো তো এসে গিয়েছে। নতুন জামা কবে হবে? বন্ধুরা সবাই কিনে নিয়েছে তো। কে, কী কিনেছে তারও গল্প করেছে। কথাগুলি বলেই চুপ করে গেলেন সুনীল ঘোষ।
আসানসোলের কোর্ট মোড় এলাকায় ঘুগনির দোকান সুনীলবাবুর। আদতে তিনি এক জন পুলকার চালক। করোনার থাবায় গত আট মাস ধরে পুলকারের চাকা গড়ছে না। রোজগার বন্ধ। তাই সংসারের খরচ সামলাতে রাস্তার মোড়ে ঘুগনির দোকান দিয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘কখনও এমন হয়নি। পুজোর ঢাকে কাঠি পড়তেই পরিবারের জন্য নতুন পোশাক কিনতাম। কিন্তু এ বার একটা সুতোও কিনতে পারিনি!’’
পুলকারের রোজগারে কোনও অভাব ছিল না গোপাল নাগেরও। পরিবারের সদস্য বলতে বিধমা মা ও এগারো বছরের মেয়ে। স্ত্রী মারা গিয়েছেন প্রায় ১০ বছর আগে। গোপালবাবু বলেন, ‘‘গত আট মাস ধরে কার্যত বসেই আছি। পুঁজি নেই। তাই অন্য ব্যবসায়ও নামতে পারছি না। কোথাও কোনও সাহায্য পেলে লাইনে দাঁড়াই।’’ আক্ষেপের সুরে তিনি বললেন, ‘‘পুজোয় এ বার মেয়ের জন্য একটা নতুন জামাও কিনতে পারলাম না!’’
এমন দুরবস্থা শুধু এই এক বা দু’জনেরই নয়। আসানসোল পুলকার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হেমন্ত মণ্ডল জানালেন, মহকুমায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পুলকার চালক আছেন। যাঁদের একমাত্র রোজগারই হল স্কুল পড়ুয়াদের গাড়ি চালানো। সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে তাঁদের রোজগার ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এই টাকায় তাঁদের সংসার চলে যায়। কিন্তু গত আট মাস ধরে এক টাকাও রোজগার নেই তাঁদের। হেমন্তবাবুর আক্ষেপ, ‘‘গোটা বছর যে বাচ্চাদের আমরা নিরাপদে স্কুলে ও বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করি, তাঁদের অভিভাবকেরা এক বারের জন্যও জানতে চাননি আমরা পরিবারের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কেমন আছি।’’ তিনি জানান, পুজোর মুখে অনেক অভিভাবকের কাছে সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছেন। কেউ এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। অভিভাবক মিন্টু রায়, শুভেন্দু রায়, তাপস দত্তরা বলেন, ‘‘পুলকার চালকদের এই অসময়ে আমরা যৎসামান্য সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছি। সকলেই সামান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে ওই পরিবারগুলির মুখে হাসি ফোটে।’’ সম্প্রতি বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় রূপনারায়ণপুরে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুলকার চালকদের হাতে সাহায্য তুলে দিয়েছেন। বিধানবাবু বলেন, ‘‘আমি চাই, সকলেই এগিয়ে আসুন।’’
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সংসারের খরচ সামলাতে অনেকেই পেশা বদলে ফেলেছেন। দিনমজুরির কাজ থেকে লোকের বাড়িতে ফাই-ফরমাস খাটা, এমনকি, শহরের বহুতলে নিরাপত্তারক্ষীর কাজও করছেন অনেকে। তাঁরা সকলেই অসংগঠিত শিল্প ক্ষেত্রের শ্রমিক। এই অসময়ে তাঁদের জন্য কি কোনও সরকারি সাহায্য পাওয়ার সুযোগ আছে? আসানসোলের ডেপুটি লেবার কমিশনার কল্লোল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মাসিক সাহায্য পাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তবে পরিবহণ কর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া পেনশন ও অন্য সরকারি অনুদান তাঁরাও পেতে পারেন। দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’’