Coal Smuggling

কয়লা চুরি নিয়ে ইসিএলকে তোপ

ঘটনাচক্রে, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিও! যদিও ইসিএল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২২ ০৭:০১
Share:

জামুড়িয়ায় কন্টেনার থেকে কয়লা উদ্ধার। ফাইল চিত্র

রাজ্য জুড়ে নানা বিষয়ে যখন পুলিশকে উঠতে-বসতে বিঁধছে বিজেপি, তখন কাকতালীয় হলেও একটি বিষয়ে কার্যত এক সুর রাজ্য পুলিশ এবং বিজেপির! সিবিআইয়ের লাগাতার অভিযানের পরেও, পশ্চিম বর্ধমানে পর পর বেআইনি কয়লা বাজেয়াপ্ত হচ্ছে। তা দেখে, ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের ধারণা, সিবিআই-তৎপরতায় বেআইনি কয়লার কারবারে লাগাম পড়লেও, তা যে পুরোপুরি বন্ধ, সেটা বলা যাবে না। এর পরেই পুলিশের সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে সরাসরি অভিযোগ, ইসিএলের বৈধ খনি থেকেই কয়লা চুরি হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিও! যদিও ইসিএল অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।

Advertisement

আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তম সরাসরি সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে দাবি করেছেন, “ইসিএলের বিভিন্ন খনি থেকে কয়লা চুরি হচ্ছে। পুলিশের অভিযানের অভিজ্ঞতায় তেমনটাই জানা যাচ্ছে।” পুলিশকর্তারা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে কয়লা পাচারের অভিযোগে ১৯৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারের সংখ্যাটা, ২৬৭ জন। প্রায় ৪,৭৭০ টন কয়লা বাজেয়াপ্তও করা হয়েছে। পুলিশকর্তাদের একাংশের অভিজ্ঞতা, বাজেয়াপ্ত কয়লার বেশির ভাগই বারাবনি, সালানপুর, কুলটি, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ থেকে করা হয়েছে। সম্প্রতি জামুড়িয়ায় দুধ ও ফলের কন্টেনার, অন্ডালে আসানসোল-বর্ধমান রুটের একটি বাসের মাথা থেকে কয়লা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, বাসের মাথায় আসানসোলের হাটন রোড থেকে কয়লা চাপানো হয়েছিল।

কিন্তু কী ভাবে ও কোথা থেকে আসছে এই কয়লা? বিশেষ কিছু সূত্র থেকে দাবি, প্রথমত, এই মুহূর্তে যে কয়লা ‘চুরি’ হচ্ছে, তা বারাবনির ইটাপাড়া, সামডি, মোহনপুর, জামগ্রাম, জামুড়িয়ার নর্থ সিহারসোল, নিউ কেন্দা, পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারির খোলামুখ খনি, বাঁকোলা এরিয়া, ঝাঁঝরা প্রকল্প এলাকা থেকে করা হচ্ছে। ওই সূত্রটির দাবি, মূলত নানা কিছু ‘ম্যানেজ’ করেই চলছে এই চুরি। তা করছে ‘অপেক্ষাকৃত’ বড় কয়লা ‘চোরেরা’। তাঁদের কাছ থেকে কয়লা কিনে সাইকেল, মোটরবাইকে করে স্থানীয় চা, তেলেভাজার দোকান, হোটেলে বিক্রি করছেন অন্যরা। পাশাপাশি, অল্প সংখ্যক হলেও, চলছে ডাম্পার ও অভিনব হলেও কন্টেনারে করে পাচারও। দ্বিতীয়ত, একটি সূত্রের দাবি, জামুড়িয়ার বীরকুলটি, রানিগঞ্জের পূর্ব-বাঁশড়া, রানিগঞ্জের টিবি হাসপাতালের পিছনে আমবাগান এলাকায় বেশ কিছু অবৈধ কুয়ো খাদান এখনও রয়েছে। তৃতীয়ত, মূলত বারাবনি ও জামুড়িয়ায় কয়লার ‘ডিও হোল্ডার’-দের (যাঁরা ইসিএলের নিলাম করা কয়লা কেনার বরাত পান) মাধ্যমে, বৈধ কয়লার কাগজ ব্যবহার করে অবৈধ কয়লা ‘পাচার’ হচ্ছে।

Advertisement

ঘটনাচক্রে, এই পরিস্থিতির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ইসিএল-কে বিঁধছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-ও। বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির অভিযোগ, “সিবিআই অত্যন্ত ভাল কাজ করছে। কিন্তু ইসিএলের নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশ দুষ্কৃতীদের কয়লা তুলে দিচ্ছেন। এলাকার অনেক তৃণমূল নেতা বেআইনি কয়লার পরিবহণে সাহায্য করছেন।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বিজেপি ও তৃণমূলের অশুভ আঁতাঁতের কারণেই জেলায় বেআইনি কয়লার কারবার বন্ধ হচ্ছে না।” যদিও যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলছেন, “আমাদের কেউ কোনও বেআইনি কারবারের সঙ্গে জড়িত নন। কয়লা রাষ্ট্রের সম্পত্তি। তা রক্ষা করার দায়িত্ব ইসিএলের।” তিনি এ-ও মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বেআইনি কয়লা কারবারের তদন্তে সিবিআই বেশ কয়েক বার ইসিএলের নানা কর্তাদের দফতরে ও বাড়িতে হানা দিয়েছে। গ্রেফতারও করেছে কয়েক জনকে।

যদিও, তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন খনি-কর্তারা। ইসিএলের জেনারেল ম্যানেজার (নিরাপত্তা) শৈলেন্দ্রকুমার সিংহ বলেন, “পুলিশ ইসিএলের কারও বিরুদ্ধে পাচারে মদত দেওয়ার প্রমাণ পেলে তাঁকে গ্রেফতার করুক। তাতে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।” তবে ইসিএল-কে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও আঁটসাঁট করার জন্য আর্জি জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। শৈলেন্দ্রকুমার যদিও বলেন, “আমাদের নিজস্ব দু’হাজার রক্ষী রয়েছে। সিআইএসএফ-এর মাধ্যমে আরও ৬৬৩ জনকে দক্ষ নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে তৈরির করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাঁদেরও দ্রুত নিয়োগ করা হবে। সিআইএসএফ-এর টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। দুষ্কৃতীদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলেও দেওয়া হচ্ছে। আমরা কয়লা চুরি রুখতে যথেষ্ট সক্রিয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement