অশান্তি হলেই হাজির পুলিশ, পুজো-মহরমে নিশ্চিন্ত শহর

পুজো মানেই ভিড়, যানজট, মোটরবাইকের দাপাদাপি। গত কয়েক বছরে বর্ধমানের চেনা ছবি এটাই। এ বার তার সঙ্গে ছিল মহরমও। ফলে একাদশী পর্যম্ত রাস্তার রাশ পুলিশ হাতে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন শহরের বাসিন্দারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৮
Share:

পুজো মানেই ভিড়, যানজট, মোটরবাইকের দাপাদাপি। গত কয়েক বছরে বর্ধমানের চেনা ছবি এটাই। এ বার তার সঙ্গে ছিল মহরমও। ফলে একাদশী পর্যম্ত রাস্তার রাশ পুলিশ হাতে রাখতে পারবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন শহরের বাসিন্দারা। পুজো শেষে যদিও তাঁদের দাবি, লেটার মার্কস নিয়ে পরীক্ষায় পাশ করেছে পুলিশ।

Advertisement

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দ্যুতিমান ভট্টাচার্য-সহ একাধিক পুলিশ কর্তাকে শহরের নানা এলাকায় দাঁড়িয়ে থেকে ভিড় সামলানোর তদারকি করতে দেখা গিয়েছে। এমনকী, ভিভিআইপি মর্যাদার ‘কার পাস’ থাকা গাড়িগুলোতেও নজর রেখেছিলেন ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকা পুলিশ-ভিলেজ ভলান্টিয়াররা। ফলে শহরের ‘লাইফ লাইন’ জিটি রোড এবং বিসি রোড কার্যত যানজট মুক্তই ছিল এই ক’দিন।

পুলিশের হিসেবে, গোটা শহরে অনুমোদিত বারোয়ারি পুজোর সংখ্যা ১০৯টি। এর সঙ্গে বড়শুল ও মেমারির পুজো রয়েছে। রেকর্ড অনুযায়ী বিকেলের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় উপচে পড়ে মূলত জিটি রোড, আলমগঞ্জ, কাঞ্চননগর, শ্যামলাল এলাকাতে। আগে দেখা গিয়েছে, যানবাহন ও দর্শনার্থীদের চাপে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ বার সেখানেও পুলিশের ভূমিকা ভাল থাকায় ভিড়ের কষ্ট মালুম পড়েনি বলে দাবি বাসিন্দাদের। বর্ধমানের বাসিন্দারা জানান, রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ ও সিভিক ভলেন্টিয়াররা ছিলেন। সঙ্গে জিটি রোডের একটা বড় অংশ জুড়ে সজাগ ছিল সিসি ক্যামেরার চোখ। ফলে নবাবহাট, শ্যামলাল, আলমগঞ্জ, উল্লাস থেকে বড়শুল, কোনও জায়গাতেই যানবাহন ও জনতার ভিড়ে জট পাকেনি। মহরম থাকায় বিসর্জন পিছিয়ে যাওয়ায় একাদশীতেও ভিড় সামলাতে হয়েছে পুজো কর্তা ও পুলিশকর্মীদের। পুলিশের দাবি, দু’একটা ঘটনা ছাড়া কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার মাধ্যমে কোথায় ভিড় বাড়ছে, গাড়ি আটকে যাচ্ছে তার আঁচ পাচ্ছিলেন পুলিশের কর্তারা। তেমনই আবার কোনও জায়গায় গোলমাল হচ্ছে কি না কিংবা কেউ গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছে কি না, সে দিকেও পঞ্চমী থেকেই পুলিশের নজর ছিল। প্রয়োজন মতো বর্ধমান পুলিশ লাইনের কন্ট্রোল রুমে খবর চলে যাচ্ছিল। ফলে কখনই পরিস্থিতি হাতের বাইরে যায়নি।

Advertisement

নবাবহাট এলাকার বাসিন্দা শতরূপ দত্তচৌধুরী বলেন, ‘‘আমি দু’দিন ঠাকুর দেখতে রাস্তায় বেড়িয়েছিলাম। একদিন দেখলাম রাত পৌনে এগারোটাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীরহাটা মোড়ে ভিড় সামলাচ্ছেন। আর এক দিন লক্ষ্মীপুর মাঠের কাছে দুই যুবকের মধ্যে বচসা শুরু হতেই ডিএসপি পদমর্যাদার এক কর্তা মোটরবাইক নিয়ে সেখানে হাজির।’’ পুলিশ কর্তারাও বলেন, ‘‘পুজো গাইড বুকে পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে সব স্তরের কর্তাদের ফোন নম্বর দেওয়া ছিল। গোলমালের আঁচ পেলেই খবর পৌঁছে গিয়েছে। সে জন্য কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়েনি।’’ পুলিশের দাবি, এ বার শহরের ১৩টি জায়গাতে পুলিশ সহায়তা কেন্দ্র ছিল। শহরে ঢোকার আট জায়গায় যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। পাশাপাশি শহরের ভিতর বীরহাটা, স্টেশনের মুখেও গাড়ির উপর নজরদারি করেন পুলিশের কর্তারা। অনুমোদিত গাড়ি ছাড়া পুজোর ক’দিন এবং মহরমের দিন জিটি রোডে কোনও গাড়ি যাতায়াত করতে দেয়নি পুলিশ। টোটো চলাচলের উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি থাকায় যানজট কমে গিয়েছিল। এমন কী গলির মোড়েও পুলিশ বা ভিলেজ ভলেন্টিয়ার্স থাকায় ফাঁকি দিয়ে দুমদাম গাড়ি নিয়ে জিটি রোডের যাওয়ারও প্রবণতা আটকে গিয়েছে।

জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবালের দাবি, ‘‘এ বার প্রথম থেকেই যানবাহন নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিয়েছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল দর্শনার্থীরা যাতে অপ্রীতিকর অবস্থায় না পড়েন, দ্বিতীয়ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা তাতে পুরোপুরি সফল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement