আটকানো হয়েছে মোটরবাইক। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
গতিতেই তাঁদের আনন্দ। তাঁদের ফূর্তি। মাথায় হেলমেট। গায়ে রেসিংয়ের পোশাক। নামী সংস্থার দামি মোটরবাইক নিয়ে ফাঁকা জাতীয় সড়ক ধরে তাঁরা সাঁ সাঁ ছোটেন কলকাতা থেকে আসানসোল পর্যন্ত। আবার অনেক সময় কলকাতা বা আসানসোল থেকে গাড়ি নিয়ে বর্ধমান এসে পরবর্তী গন্তব্যস্থল ঠিক করেন ওই মোটরবাইক চালকেরা। প্রতি রবিবার এ ভাবেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ‘জয় রাইড’-এ বেরোন এক দল যুবক। কিন্তু এই রবিবার ভোরে বর্ধমান শহরের উল্লাস মোড়ে ৩৮ জন যুবক মোটরবাইক নিয়ে জড়ো হতেই পুলিশ তাঁদের আটকায়। পুলিশ জানিয়েছে, এ রকম ‘জয় রাইড’ করার জন্য এক জন ‘উৎসাহকারী’কে আটক করা হয়েছে। তাঁর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলা পুলিশ ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “বেপরোয়া গাড়ি যাতায়াতের জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা কমানোর জন্য জেলা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগ নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে ট্র্যাফিক পুলিশ উল্লাস মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বেপরোয়া ভাবে মোটরবাইক নিয়ে যাতায়াত করার জন্য ওই চালকদের বিরুদ্ধে মোটর ভেহিক্লস আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়েছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকদের বাড়ি আসানসোল, চুঁচুড়া, রানিগঞ্জ, কলকাতা, বর্ধমান। তাঁদের কাছে থাকা সবচেয়ে কম দামের বাইক ছিল তিন লক্ষ টাকার। সব চেয়ে বেশি দামি ১৩ লক্ষের। বর্ধমানে জড়ো হয়ে তাঁদের অন্য কোনও জায়গায় ‘রেস’ করার মতলব ছিল। এ দিন ভোর থেকেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে ডিএসপি (ট্র্যাফিক)-র প্রদীপ মণ্ডলের নেতৃত্বে পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশ সুপার বলেন, “উল্লাস মোড়ে মোটরবাইকগুলি আসতেই তাঁদের পথ আটকানো হয়। তার পর চালকদের কাছ থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ব্লু বুক-সহ অন্যান্য নথি বজেয়াপ্ত করে জরিমানা করা হয়। ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানা জমা না দিলে আইন অনুযায়ী পরবতী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই) সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় পালসিট থেকে পানাগড় পর্যন্ত ১৯ জন মারা গিয়েছিলেন। এ বছর সেখানে ১০ জন মারা গেলেও বেশির ভাগটাই মোটরবাইক দুর্ঘটনার পরিণাম। একের পর এক দুর্ঘটনার জন্য যান নিয়ন্ত্রণ ও গতি রোধও পুলিশের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর নভেম্বরে বর্ধমানের যুবক বিক্রম হাজরা তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে মোটরবাইকে ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রমের ‘চ্যালেঞ্জ’ নিয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের ফতেপুর থেকে বর্ধমান শহরে আসার সময় গলসির কাছে পথ দুর্ঘটনায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়। এর পরেও ‘জয় রাইড’ অভিযান যে বন্ধ হয়নি, রবিবার পুলিশের অভিযানে তা স্পষ্ট। পুলিশ সুপার তাই জানাচ্ছেন, প্রয়োজনে ওই সব মোটরবাইক চালকের লাইসেন্স বাতিল করার প্রক্রিয়া নেওয়া হবে। একই সঙ্গে ‘জয় রাইড’ আয়োজকদের খুঁজে আইন অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সেটাও দেখতে হবে।