প্রতীকী ছবি।
ফোন বা মেসেজ মারফত নেওয়া হচ্ছে ‘অর্ডার’। তার পরে ব্যাগে ভরে সাইকেল বা মোটরবাইকে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার বাড়িতে। হাইকোর্ট এ বার বাজি বিক্রি ও পোড়ানো নিষিদ্ধ করার পরে কিছু জায়গায় এই ব্যবস্থাতেই বেচা-কেনা চলছে, দাবি বিক্রেতাদের একাংশের। আদালতের নির্দেশের পরে, পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে বাজি বাজেয়াপ্ত করতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। আরও বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে দাবি জেলা পুলিশের।
বাজি ব্যবসায়ীদের একাংশ ও কিছু ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই পরিস্থিতিতে নতুন পদ্ধতির আশ্রয় নিচ্ছেন এক শ্রেণির বিক্রেতারা। ফোন বা মেসেজের মাধ্যমে বাজির বরাত নিতে শুরু করেছেন তাঁরা। তবে সে জন্য ক্রেতাকে বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। বরাত মেলার পরেই বাজি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ক্রেতার দোরগোড়ায়। পুলিশের চোখ এড়ানোর জন্যই এ রকম ব্যবস্থা বলে দাবি ওই বিক্রেতাদের। এক বিক্রেতার কথায়, ‘‘বাজি পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে। যতটা বিক্রি করা যায়, সেটাই লাভ। ক্রেতার ঘরে থাকলে তো আর পুলিশ কিছু করতে পারবে না। তাই এই ব্যবস্থা।’’ স্থানীয় নানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতার, আউশগ্রাম, বর্ধমান ২ ব্লক এবং দক্ষিণ দামোদর এলাকার বেশ কিছু কালীপুজো উদ্যোক্তাও এই ব্যবস্থায় বাজি কিনেছেন।
কী ভাবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বাজি? জানা গিয়েছে, এক-একটি মোটরবাইকে দু’তিন জন করে থাকছেন। ব্যাগের ভিতর রংমশলা, তারাবাতি, চরকি, তুবড়ি-সহ নানা বাজি থাকছে। ব্যাগের উপর কাপড় বা পিচবোর্ড দিয়ে ঢাকা থাকছে। ক্রেতার দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে কোথায় যেতে হবে জানার পরে সেখানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বর্ধমান শহর-সহ কিছু এলাকায় নানা দোকানের সামনে এখনও আতসবাজির পসরা দেখা যাচ্ছে। বর্ধমানের এক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ জানি। কিন্তু মহাজন আমাদের বাজি ফেরত নিতে চাইছে না। সে জন্য সমস্যা হচ্ছে।’’
ফোন মারফত বাজির ‘অর্ডার’ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। সে জন্য আমরা উল্টো পথে হাঁটা শুরু করেছি। যে পরিমাণ বাজি বাড়ি গিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে মামলা বা গ্রেফতার করা যাবে না। তাই বিক্রেতাদের উপরেই চাপ বাড়ানো হচ্ছে। তাঁরা কাদের বাজি বিক্রি করেছেন, সেই নাম ও ফোন নম্বর আদায় করা হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে হাইকোর্টের রায়ের কথা জানানো হচ্ছে।’’ পুলিশের দাবি, লক্ষ্মীপুজোর পর থেকে কাদের আতসবাজি বিক্রি করা হয়েছে, সেই তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিভিক ভলান্টিয়ারেরা ওই তালিকা দেখে সরাসরি গিয়ে বা ফোনে বাজি ব্যবহার নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়ে দিচ্ছেন। ওই পুলিশ-কর্তার দাবি, ‘‘তাতে ওই ক্রেতারা বুঝতে পারছেন, পুলিশের নজর রয়েছে। তাতে চাপ থাকছে তাঁদের উপরে।’’
সমস্ত ক্রেতার নাম-নম্বর এ ভাবে মিলছে কি না, সে প্রশ্ন অবশ্য রয়ে যাচ্ছে। তাই বাজির দূষণ থেকে কতটা রেহাই মিলবে, সংশয় থাকছেই বলে দাবি বাসিন্দাদের একাংশের।