—প্রতীকী চিত্র।
জেলবন্দি জঙ্গল শেখ ও তাঁর ছেলে সাদ্দাম কাটোয়ার বেশ কিছু ব্যবসায়ীর থেকে নিয়মিত তোলা আদায় করত বলে খবর ছিল পুলিশের কাছে। সেই কাজে সাহায্য করার অভিযোগে কাটোয়ার উপপুরপ্রধান লখিন্দর মণ্ডল ওরফে লখাইয়ের ভাগ্নে অমিত মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জেলে থাকলেও জঙ্গল-সাদ্দাম জুটি কী ভাবে সক্রিয় রয়েছে, ধৃত যুবককে হেফাজতে জেরা করে সে সম্পর্কে তথ্য জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
রবিবার বিকেলে কাটোয়া শহরের স্টেশন বাজারে উপ-পুরপ্রধানের পেঁয়াজ-আদার গুদামে ধৃতকে নিয়ে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, গুদামের একটি ঘরে খাটের তলা থেকে ছোট একটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। ওই মোবাইলের মাধ্যমেই সাদ্দামদের সঙ্গে অমিত যোগাযোগ রাখত বলে পুলিশের ধারণা। কার মদতে অমিত তোলাবাজি ও অপরাধমূলক ষড়ষন্ত্র চালিয়ে যেত, সে সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ কছে পুলিশ। তদন্তকারীরা মনে করছেন, কান টানলে মাথা আসবে। সূত্রের খবর, কাটোয়া শহরের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা এই চক্রে জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। চলতি সপ্তাহেই তৃণমূলের ওই নেতাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস পাঠাতে পারে।
কাটোয়ার বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় আগেই দাবি করেছেন, জঙ্গল-সাদ্দামদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অমিত তাঁকে ও তাঁর ছায়াসঙ্গী দিগন্ত পাল-সহ কয়েক জনকে খুনের ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগ আসার পরে পুলিশেও শোরগোল পড়েছে। সব দিক খোলা রেখে তদন্ত করছেন আধিকারিকেরা।
এ দিকে, শনিবার রাতে কাটোয়ার গাঙ্গুলিডাঙা গ্রাম থেকে গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল নামে এক যুবককে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়। এখন সে পুলিশের হেফাজতে। তাকে জেরা করা হচ্ছে। জঙ্গলদের সঙ্গে গিয়াসউদ্দিনের ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে পুলিশের দাবি। সে কাটোয়ায় অপরাধমূলক কাজের ছক কষছিল বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গল শেখ রয়েছে হুগলি জেলে। সাদ্দামের বর্তমান ঠিকানা বর্ধমান সেন্ট্রাল জেল। জেলে থেকেই দীর্ঘদিন ধরেই তারা কাটোয়ার ব্যবসায়ীদের কাছে তোলা চেয়ে হুমকি দিত বলে অভিযোগ। তোলার টাকা আদায়ের নির্দেশ আসত অমিতের কাছে। একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে অমিত ও সাদ্দামের কথোপকথনের অডিয়ো রেকর্ডিং তাদের হাতে এসেছে বলে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ জানতে পারে, দিন কয়েক আগে শহরের সুবোধ স্মৃতি রোডে একটি লজের সামনে এক ব্যবসায়ীর থেকে অমিত টাকা নিয়েছে। ফোন কল ও সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও তার সত্যতা মিলেছে। এই সব তথ্য আদালতে জমা দেওয়া হবে বলে দাবি পুলিশের।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “জঙ্গল শেখ ও সাদ্দামদের আদালতে এরই মধ্যে হাজিরা দেওয়ার দিন রয়েছে। জঙ্গলের লোক ভিন্ রাজ্যে এবং এ রাজ্যের নানা জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। তারা কাটোয়ায় অপরাধমূলক কাজ ও খুনের ষড়ষন্ত্র করছিল। গোপন সূত্রে সে খবর পেয়ে জঙ্গলের সাগরেদ গিয়াসউদ্দিনকে গ্রেফতার করে হেফাজতে নিয়েছি। অমিতের একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। এর পিছনে আরও বড় মাথা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, “আমাদের দল অন্যায়কে প্রশয় দেয় না। জেলে থাকলেও জঙ্গলরা আমাদের প্রাণে মারার চেষ্টা যে করছে, তা বার বার বলেছি। ব্যবসায়ীদের একটা অংশ জঙ্গলদের টাকা দিয়ে সাহায্য করেন। পিছনে কারা আছে, পুলিশ তদন্ত করে খুঁজে বার করুক। দলীয় নেতৃত্বকে সব জানানো রয়েছে।”