শোকগ্রস্ত পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
গুলি করে শাহবাজ আলম (২৪) নামে এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠেছিল পশ্চিম বর্ধমানের বরাকরে। ওই ঘটনায় নিহতের পরিবার তিন জন স্থানীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। তাঁদের মধ্যে রাকেশ শর্মা ও বান্টি মজুমদার নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনার নেপথ্যে অবৈধ মাদকের কারবার থাকতে পারে বলে পরিবারের অভিযোগ। যদিও খুনের কারণ নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ বরাকর পেট্রল পাম্প লাগোয়া পাথরখাদ এলাকার একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শাহবাজকে উদ্ধার করে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকেরা। রাতেই কুলটি থানায় নিহতের বাবা সাব্বির আলম পুলিশে লিখিত অভিযোগ করে জানান, শুক্রবার বিকেলে শাহবাজকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান ছেলেরই দুই ‘বন্ধু’ বান্টি ও রাকেশ। এর ঘণ্টাখানেক পরে, তাঁরা ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পান।
ঘটনার নেপথ্যে মাদকের কারবারের যোগ থাকতে পারে বলে পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। লিখিত অভিযোগে সাব্বির দাবি করেছেন, বরাকরের বাসিন্দা, পেশায় এক মাদকের কারবারির নির্দেশে রাকেশ ও বান্টিই শাহবাজকে গুলি করেছেন। শনিবার সকালে শাহবাজের মা রাবেয়া বেগমও সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে অভিযোগ করেন, “আমার ছেলেকে মাদকের অবৈধ কারবারে নামানোর চেষ্টা হয়েছিল। ও রাজি না হওয়াতেই এই পরিণতি।”
তদন্তকারীরা জানান, অবৈধ মাদকের (সম্ভবত ব্রাউন সুগার, দাবি পুলিশ সূত্রের) মোড়ক-সহ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে ঘটনাস্থল থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, বরাকরে সম্প্রতি মাদক-কারবারিদের গতিবিধি চোখে পড়ছে। তাঁদের মূল লক্ষ্য, বিভিন্ন বয়েসের কিশোর ও যুবকেরা। বরাকরে এই মাদককে ‘কাঠি’ বলে ডাকা হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, যেখান থেকে শাহবাজকে উদ্ধার করা হয়েছিল, সেখানেই দিনভর এই কাঠি-সেবন চলে বলে অভিযোগ। ওই এলাকাটিকে সাঙ্কেতিক ভাষায় ‘চামেলি গলি’ বলে ডাকেন মাদক কারবারি ও সেবনকারীরা, জানা গিয়েছে বিশেষ সূত্রে। এ ছাড়া, ডিসেরগড় রোড, নিমাকানালি, বরাকর বাসস্ট্যান্ড, আড়াডাঙা, জনকপুরার মতো কিছু এলাকাতেও মাদক কারবারিদের আড্ডা রয়েছে বলে অভিযোগ।
বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, মূলত দু’জনের ‘নেতৃত্বে’ এই গোটা কারবার চলছে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজনৈতিক নেতারাও। কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার বলেন, “বরাকরে গত কয়েক বছর ধরে ড্রাগ-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। নষ্ট হচ্ছে কিশোর ও যুবকদের ভবিষ্যৎ। আমরা পুলিশের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছি।” তৃণমূল নেতা সজল ঘোষও বলেন, “পুলিশ আরও সক্রিয় না হলে, মাদকের এই কারবার বন্ধ
করা অসম্ভব।”
পুলিশ জানায়, এ দিন রাকেশ ও বান্টিকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁদের পরিবারের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এ দিকে, এ দিন জেলা হাসপাতালে দেহের ময়না-তদন্ত করানোর পরে, শাহবাজের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, শনিবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলে র্যাফ এবং কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবে এই ‘খুনের’ সঙ্গে মাদকের কারবারের যোগ কতটা, সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত নন তদন্তকারীরা। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পশ্চিম) অভিষেক মোদী বলেন, “এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, মাদক সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই খুন কি না। তবে পুলিশ সব সম্ভাবনা মাথায় রেখেই তদন্ত করছে।”