ব্লক কৃষি দফতরের উদ্যোগে আলোচনাসভা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
এলাকার অর্থনীতি নির্ভরশীল চাষা-আবাদের উপরে। তবে সেই কাজের তদারকিতে দেখা যায় মূলত পুরুষদের। মহিলাদের একাংশ খেতমজুরিতে যুক্ত থাকলেও চাষ দেখভালের দায়িত্বে তাঁদের বিশেষ দেখা যায় না। চাষের কাজে মহিলারা যাতে এগিয়ে আসেন, সে বিষয়ে উদ্যোগী হল পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর ব্লক কৃষি দফতর। মাটির তলার জল যাতে কম তুলতে হয়, সে জন্য বোরো চাষের এলাকা কমিয়ে ডাল ও তৈলবীজ চাষ বাড়ানোর দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ওই দফতরের।
২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী, মন্তেশ্বরে চাষি পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার। ১৩টি পঞ্চায়েত এলাকার বহু মানুষ বছরের নানা সময়ে ধান চাষ করেন। কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, মূলত পরিবারের পুরুষরাই সেই চাষ দেখাশোনা করেন। সেই রীতি ভাঙতে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের চাষের কাজের নানা বিষয় নিয়ে উৎসাহিত করার পরিকল্পনা হয়েছে।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘মডেল ভিলেজ’ হিসাবে চিহ্নিত হোসেনপুর গ্রামে ইতিমধ্যে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্যাদের মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেখানে মাশরুম উৎপাদন শুরুও হয়েছে। বিক্রির ব্যাপারে সহায়তা করছে কাটোয়ার একটি সংস্থা। কৃষি দফতর চত্বরের মধ্যে রয়েছে একটি আমবাগান। আধিকারিকেরা জানান, সেটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মহিলাদের। কী ভাবে ভাল ফলন পাওয়া যায়, পোকামাকড় থেকে রক্ষায় কোন কীটনাশক ছড়ানো প্রয়োজন, সে সব হাতেকলমে দেখানো হচ্ছে।
এ ছাড়া, চাষের কাজে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার কমাতে চাষিদের ডাল এবং তৈলবীজ চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে জানান কৃষি-কর্তারা। এক সময়ে ধান ছাড়া আর অন্য কোনও ফসলের চাষ বিশেষ হত না এই ব্লকে। সেখানে এখন ৬৫০ হেক্টর জমিতে তিল এবং ৩০০ হেক্টরে ডালচাষ হচ্ছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়। মহিলাদের মধ্যেও তৈলবীজের বীজ চেয়ে আবেদন জমা পড়েছে বলে জানান কৃষিকর্তারা। দু’টি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীকে তিলের কল এবং একটি গোষ্ঠীকে ডালের কল তৈরির ব্যাপারে সহয়তা করা হচ্ছে বলে তাঁরা জানান।
বৃহস্পতিবার ‘কৃষিতে মহিলাদের স্বনির্ভরকরণ’ বিষয়ে একটি আলোচনাসভা হয় কুসুমগ্রামে কিসানমান্ডিতে সহ-কৃষি আধিকারিকের দফতরে। সেখানে মহিলাদের জানানো হয়, বিভিন্ন মাশরুম, তিল, ভুট্টা, সোনামুগ, ধানের চারা তৈরি, ডালের বড়ি তৈরি, নার্সারি, কিচেন গার্ডেন, বাড়ির অব্যবহৃত জমিতে অড়হর ডাল চাষের সুযোগ রয়েছে তাঁদের। গোষ্ঠীগুলি এগিয়ে এলেই কৃষি দফতর প্রশিক্ষণ-সহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেবে।
এ দিনের অনুষ্ঠানে হাজির রুমা পাল, ডালিয়া শেখ, আর্জিনা বিবি, দীপান্বিতা রায়, ডালিয়া খাতুন আনসারিরা বলেন, ‘‘আমরাও যে চাষে সফল হতে পারি, সেই বিশ্বাস জোগাচ্ছে কৃষি দফতর।’’ মন্তেশ্বর ব্লক কৃষি আধিকারিক কনক দাস বলেন, ‘‘চাষে মহিলার সংখ্যা ধাপে-ধাপে বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে। মহিলাদের তরফেও উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত বহু মহিলা বিভিন্ন চাষ করে স্বনির্ভর হবেন।’’ তাঁর দাবি, মহিলাদের বিকল্প চাষে উৎসাহ দিলেই পরিবারের বাকি সদস্যেরা গতানুগতিক চাষ থেকে বেরিয়ে আসার কথা ভাববেন বলে মনে করছেন তাঁরা।