ধান গাছের সেই পোকা। — ফাইল চিত্র।
বৃষ্টির অভাবে ধানচাষে সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। এখন ধান পাকার মুখে শুকিয়ে যাচ্ছে শিষ। বাদামি শোষক পোকার আক্রমণে কার্যত দিশেহারা পূর্ব বর্ধমানের চাষিরা। কোথাও কোথাও আবার ধসার আক্রমণও শুরু হয়েছে। চাষিদের দাবি, খরিফে জল কিনতে গিয়ে বাড়তি খরচ হয়েছে। এখন ঋতু বদলের পাশাপাশি আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে ধানগাছে। কয়েক হাজার টাকা খরচ করে কীটনাশক প্রয়োগ করলেও সুরাহা মিলছে না। সবুজ ধানগাছ খড়ের চেহারা নিচ্ছে।
জেলা উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) আশিসকুমার বারুই বলেন, “প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে ব্লকের সহ-কৃষি আধিকারিকদের।’’ কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠান্ডা-গরমের সমস্যার কারণেই দেখা দিচ্ছে পোকার উৎপাত। বিশেষ করে ধান পাকার মুখে গড় তাপমাত্রা ২২ ডিগ্রির আশপাশে থাকলে বাদামি শোষক পোকার আক্রমণ হয় না। দিনের বেলা তাপমাত্রা থাকছে ২৮-৩০ ডিগ্রি। সে কারণে শত্রু পোকার আক্রমণ হচ্ছে।
চাষিরা জানিয়েছেন, এর আগে খোলা পচা রোগ ও মাজরা পোকার আক্রমণ হয়েছিল। এখন যোগ হয়েছে বাদামি শোষক পোকার হামলা। কৃষিকর্তাদের মতে, সমস্যার নেপথ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। ঘন করে ধান রোয়ার কারণে গাছের ভিতর হাওয়া কম খেলে। অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করায় সমস্যা হয়। একই সময়ে গোটা মাঠ জুড়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা হয় না। ফলে জমির কোথাও কীটনাশক দেওয়া হলে, পোকাগুলি অন্যত্র চলে যায়।
কৃষি-বিশেষজ্ঞ সুকান্ত মুখোপাধ্যায় মনে করছেন, “চাষিরা নিজেদের মতো করে কীটনাশক প্রয়োগ করার ফলে বন্ধু পোকাগুলি মরে যাচ্ছে। সে সুযোগে বাদামি শোষক পোকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শোষক পোকা দমনের জন্য বন্ধু পোকা বাঁচিয়ে রাখা প্রয়োজন।’’
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, একটি জমিতে ছোট ব্লক করে তিন দিক দিয়ে কীটনাশক প্রয়োগ করে পোকাগুলিকে এক জায়গায় এনে কীটনাশক ছড়াতে হবে। তবেই বাদামি শোষক পোকার বিস্তার কমানো যাবে। তা না হলে ১০ দিন পরেই আগের পরিস্থিতি তৈরি হবে। চাষিরা জানান, বাদামি রঙের শোষক পোকা দেখতে খুব ছোট। এক সঙ্গে ১৫-২০টি পোকা একটি গাছকে আক্রমণ করে। ধানগাছের গোড়ায় বসে রস শুষে নেয়। চোখে পড়ার আগেই গাছ শুকিয়ে খড় হয়ে যায়।
কাটোয়ার চাষি সুজিত ঘোষ, মেমারির সুকুমার ঘোষদের আক্ষেপ, “সাত দিনের মধ্যে ধান শুকিয়ে খড় হয়ে গিয়েছে।” রায়নার চাষি মালেক শেখ বলেন, ‘‘ধানজমিতে আচমকা ভ্যানভ্যানের হামলা শুরু হয়েছে। জমিতে পা দিলেই দেখা যাচ্ছে, ধানগাছের গোড়ার আশপাশে থিকথিক করছে এই পোকা। জমির যে অংশে পোকার হামলা বেশি, সেখানে ‘চাক চাক দাগ’ (হপারবার্ন) হয়ে গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে।’’ গলসির পার্থসারথি সামন্ত, জামালপুরের মাধাই সরকারদের দাবি, “দামি কীটনাশক প্রয়োগ করে সুরাহা মিলছে না। অথচ, চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’’ তাঁদের আশঙ্কা, যে সব মাঠে বাদামি শোষক পোকার আক্রমণ হয়েছে, সেখানে অন্তত ৩০-৪০ শতাংশ ফলন কম হতে পারে।