জলের জন্য লাইন দুর্গাপুরে। ছবি: বিশ্বনাথ মশান
আশঙ্কা সত্যি করে রবিবার সকাল থেকে দুর্গাপুরের কিছু এলাকায় শুরু হয়েছে পানীয় জলের আকাল। এ দিন ডিপিএল কলোনিতে জল আসেনি। শহরের অন্য কয়েকটি জায়গা থেকেও জলসঙ্কটের খবর এসেছে।
দুর্গাপুর পুরসভার ৪৩টি ওয়ার্ডের আটটিতে জল সরবরাহ করে ডিএসপি। বাকি ওয়ার্ডগুলির বেশির ভাগ এলাকায় জল সরবরাহ করে দুর্গাপুর পুরসভা। এ দিন মেয়র দিলীপ অগস্তি বলেন, ‘‘রবিবার একবেলা জল দেওয়া হয়েছে। সোমবার ট্যাঙ্কারে করে জল পাঠানো হবে। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে জলের পাউচ দেওয়া হয়েছে। জলের অপচয় না করলে এবং কম জল ব্যবহার করলে সমস্যা হবে না।’’ তবে, এ দিন বেলা গড়াতেই সগড়ভাঙা, বিধাননগরের বাসিন্দাদের একাংশ জল পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন। বিধাননগরের বাসিন্দা তথা সিপিএম নেতা পঙ্কজ রায় সরকারের অভিযোগ, ‘‘পুরসভা মাইকিং করে ব্যারাজের গেট ভাঙার জন্য পানীয় জল সরবরাহে বিঘ্ন হবে বলে প্রচার করেই দায় সেরেছে।’’
এ দিন সব থেকে খারাপ অবস্থা ছিল ডিপিএল টাউনশিপে। সেখানের প্রায় তিন হাজার আবাসনে এ দিন জল আসেনি বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। ডিপিএল এখানে জল সরবরাহ করে। টাউনশিপের একটি জলাধারে প্রথমে জল আসে। তার পরে তা আবাসনগুলিতে সরবরাহ করা হয়। এ দিন সকালে জলাধারে জল মেলেনি। জলাধারের তলানি জলটুকু পেতেই লাইন পড়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল মণ্ডল, মেঘনা মান্নাদের উদ্বেগ, ‘‘শনিবার ব্যারাজে বিপত্তি ঘটেছে। রবিবার থেকেই জল এল না। জানি না, আগামী দিনে কী হবে।’’
ডিপিএল-এর আইএনটিইউসি নেতা উমাপদ দাসের অভিযোগ, ডিপিএল কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি। তবে ডিপিএল-এর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক স্বাগতা মিত্র দাবি করেন, ‘‘ফিডার ক্যানালের জলস্তর নেমে যাওয়ায় পাম্পে জল উঠছে না। তাই এই পরিস্থিতি।’’ পুরসভার কাছে ট্যাঙ্কার চাওয়া হবে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্তনেওয়া হবে।
এ দিকে, জলের অভাবে সমস্যা শুরু হয়েছে বিভিন্ন কারখানায়। একটি বেসরকারি কার্বন ব্ল্যাক প্রস্তুতকারক কারখানায় নিজস্ব তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র চালানোর জন্য দামোদরের জল পাম্পের সাহায্যে তুলে কাজে লাগানো হয়। জলতল নেমে যাওয়ায় পাম্প চালানো যাচ্ছে না। ফলে ট্যাঙ্কারে করে জল এনে কোনও রকমে উৎপাদন স্বাভাবিক চালু রাখা হয়েছে বলে জানান কারখানার এক আধিকারিক। ডিপিএল-এ আপাতত দু’দিনের জন্য জল মজুত রাখা হয়েছে। তার মধ্যে ব্যারাজের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সমস্যায় পড়তে হবে বলে সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান, জল-পরিস্থিতির আসল পরীক্ষা আজ, সোমবার থেকে শুরু হবে। তাঁদের আশঙ্কা, ২০১৭-য় গেট ভাঙার পরে শহর জুড়ে জলের যে হাহাকার, কালোবাজারি তৈরি হয়েছিল, এ বারেও তেমনটা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও মেয়র দাবি করেন, ‘‘২০১৭-র পরিস্থিতি এ বার নেই। সাব-মার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছে। পাম্প থেকে জল তুলে ট্যাঙ্কারে করে সরবরাহ করা হবে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।’’