সাত সকালে ঢাক বাজিয়ে গ্রামের পুকুর পাড়ে ছুটছেন জেলাশাসক। আবার কোথাও মাদলা হাতে গ্রামবাসীদের সজাগ করছেন জেলা সভাধিপতি। উদ্দেশ্য একটাই, খোলা জায়গা থেকে শৌচাগার ব্যবহারের অভ্যাস তৈরি। কাটোয়া, কালনা থেকে আসানসোলের গ্রাম— সর্বত্রই প্রতি দিনই নানা অভিযান চলছে। তার মধ্যেই প্রকট হয়ে উঠেছে শহরগুলির শৌচাগারের বেহাল দশা। পুর কর্তাদের যদিও দাবি, কয়েক বছরের মধ্যেই পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বদলে যাবে।
জেলার অধিকাংশ শহরেই এখনও রেল লাইনের ধারে কিংবা সেচ খালের ধারই বাসিন্দাদের শৌচাগার। পরিস্থিতি শোধরাতে বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্প এসেছে। কিন্তু বর্ধমান জেলার দুটি কর্পোরেশন ও ৮টি পুরসভাকে ‘নির্মল’ করা যায়নি। শৌচাগারহীন পরিবারের সঙ্গে রয়েছে অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার। যার হিসেব সরকারি স্তরের রিপোর্টে অমিল। যদিও পুরসভার কর্তাদের দাবি, কতগুলি পরিবার শৌচাগারহীন, তার সংখ্যা মিলেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিধিসম্মত শৌচাগার তৈরি করা সম্ভব হবে।
বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (পুরসভাসমূহ) রত্নেশ্বর রায় বলেন, “গ্রামীণ এলাকার মতো শহরেও শৌচাগার নিয়ে অভিযান করতে চায় প্রশাসন। সে জন্য সমস্ত পুরসভার কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হবে।” কাল, শুক্রবার বেলা ১১টায় জেলা শাসক দফতরে ওই বৈঠক হওয়ার কথা। প্রশাসনের হিসেবে, জেলার আটটি পুরসভায় ১ লাখ ২১ হাজার ২১৩টি পরিবার শৌচাগারহীন। এই হিসেবের বাইরে রয়েছে বিভিন্ন বস্তিতে থাকা পরিবারগুলি, যেখানে শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। তার উপর রয়েছে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি শৌচাগার। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “পুরসভাগুলি যে রিপোর্ট পাঠিয়েছ, তাতে আমাদের বেশ সন্দেহ রয়েছে। যেমন, কাটোয়া পুরসভা রিপোর্ট দিয়েছে ৬০টি বিপিএল পরিবারে শৌচাগার নেই, অথচ দারিদ্রসীমার ঊর্দ্ধে বসবাসকারীদের (এপিএল) নিয়ে কোনও রিপোর্ট জমা দেয়নি। আবার গুসকরা পুরসভার দাবি, সব এপিএল পরিবারের শৌচাগার রয়েছে। এটা কী বাস্তবে সম্ভব!”
রিপোর্ট অনুযায়ী, আসানসোল পুরসভায় ৪২ হাজার ১৬২টি বিপিএল ও ১০ হাজার ৫৪১টি এপিএল নিয়ে মোট ৫২ হাজার ৭০৩টি পরিবার শৌচাগারের বাইরে। দুর্গাপুরে ৭ হাজার ৯৫টি বিপিএল ও ১৮ হাজার ৬৯৩ এপিএল, মোট ২৫ হাজার ৭৮৮টি পরিবারে শৌচাগার নেই। বর্ধমান পুরসভায় ১২৫৯২ বিপিএল ও ২৩ হাজার ১৬৯টি এপিএল, মোট ৩৫ হাজার ৭৬১টি পরিবার শৌচাগারহীন। এ ছাড়াও মেমারিতে ১৩৬০টি, কালনাতে ১১২০টি, দাঁইহাটে ১৫৮৭টি পরিবারে শৌচাগার তৈরি করতে হবে।
বর্ধমানের মতো প্রাচীন শহরে অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার থাকার সম্ভাবনা বেশি। পুরসভার নিজস্ব হিসেবে, শহরে ৫৩৬৭টি অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার রয়েছে। এ ধরনের শৌচাগারে পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়ে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কয়েকবছর আগে শহর থেকে অস্বাস্থ্যকর শৌচাগার নির্মূল করতে ও নতুন শৌচাগার করার জন্য সরকারি উদ্যোগ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে যে কিছুই হয়নি , তা প্রমাণ করেছে এই রিপোর্ট। পুরপ্রধান স্বরূপ দত্ত বলেন, “স্বচ্ছ ভারত অভিযানে ‘সিটি স্যানিটেশন প্ল্যান’-এ ৮টি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেখানে কমিউনিটি শৌচাগার থেকে শহরকে নির্মল করার কাজ ধাপে ধাপে করা হবে।” আসানসোলের মেয়র বলেন, “আমাদের অনেকগুলি নতুন এলাকা সংযোজিত হওয়ার জন্য সংখ্যাটা অনেক বড় লাগছে। প্রতি বছর ২০ হাজার করে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।” দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায়েরও দাবি, “কমিউনিটি শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। জেলায় এখন গ্রামীণ এলাকায় শৌচাগার তৈরির উদ্যোগ চলছে। তারপরেই শহরাঞ্চলে শৌচাগার তৈরির কাজ শুরু হবে।”