পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় পড়ে রয়েছে সুফল বাংলার মোবাইল ভ্যান। ছবি: বিকাশ মশান ।
বছরখানেক আগে গাড়ির সংখ্যা ছিল আটটি। বর্তমানে তা একটিতে ঠেকেছে। রাজ্য সরকারের ‘সুফল বাংলার’ এই প্রকল্প কাঁকসায় মুখ থুবড়ে পড়েছে, এমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন ও সমবায় দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। প্রকল্প থেকে ঠিক মতো পরিষেবা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ চাষিরাও।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, চাষি ও ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে এই প্রকল্প চালু করা হয়। চাষিদের কাছ থেকে নগদে আনাজ কিনে, তা ক্রেতাদের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেওয়ার কাজ হয় সুফল বাংলা প্রকল্পে। এর ফলে, এক দিকে চাষিরা যেমন ফসলের ন্যায্য দাম পান। তেমনই তাঁদের ফড়েদের উপরে নির্ভর করতে হয় না। অন্য দিকে, সাধারণ মানুষও ন্যায্য দামে টাটকা আনাজ হাতে পান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জানুয়ারিতে কলকাতা থেকে ‘ভার্চুয়াল’ ব্যবস্থায় এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিনই কাঁকসায় কিসান মান্ডি থেকে এই প্রকল্পের সূচনা করেন মন্ত্রী প্রদীপ। মোট আটটি গাড়ি চালু হয়েছিল। এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রথম কয়েক মাস সব ঠিকই চলছিল। পরে গাড়ির সংখ্যা একটি একটি করে কমতে থাকে। তাঁদের অভিযোগ, এক সময়ে ছ’টি গাড়ি কলকাতা ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাকি দু’টি টিমটিম করে চলছিল। সম্প্রতি ওই দু’টির মধ্যে একটি গাড়ি বিকল হয়ে গিয়েছে। কিসান মান্ডির ঘরে ঝুল জমেছে।
গাড়ির দায়িত্বে থাকা কর্মী বাবর আলির দাবি, “আমাদের কোনও আনাজ হয়তো ২০ কেজি দরকার। কিন্তু চাষি ৫০ কেজি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সবটাই নিতে হবে বলে জোর করছেন। তা ছাড়া চাষিরা এখন আর সে ভাবে আনাজ দেন না। তাই বাকি গাড়িগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চাষি বলেন, “প্রকল্পটি খাতায়কলমে ভাল। কিন্তু বাস্তবে নয়।কারও ৩০ কেজি আনাজ উৎপাদিত হলে, কিসান মান্ডিতে হয়তো পাঁচ কেজি নেবে। বাকিটা নিয়ে চাষিরা কী করবেন?” তাঁরা জানিয়েছেন, বাধ্য হয়ে সেই ফড়েদের উপরেই নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। তা ছাড়া এলাকায় কোনও হিমঘর না থাকায়, তুলনায় কম দামে ফড়েদের কাছে ফসল দিতে বাধ্য হন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা। বিজেপির কাঁকসা ব্লক সহ-সভাপতি ইন্দ্রজিৎ ঢালির কটাক্ষ, “এই রাজ্যে প্রকল্প ঘোষণা করা হয়। কিন্তু প্রকল্পের সুফল সাধারণ মানুষ পান না। কাঁকসায় আটটি সুফল বাংলার মোবাইল ভ্যান চালু হয়েছিল। সেগুলি এখন কোথায়?” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “সরকারটাই তো ফড়েদের। তাই এ সব লোক দেখানো প্রকল্প চালু করে, তলায় তলায় বন্ধ করে দেয়।” মন্ত্রী প্রদীপ অবশ্য বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নেব। চাষিদের কী সমস্যা হচ্ছে, তা দেখে সমাধান করা হবে। অবশ্যই ব্যবস্থা হবে।”