জামালপুরের চট্টোপাধ্যায় বাড়ির জগদ্ধাত্রী। নিজস্ব চিত্র।
পুরাণ মেনে নারদ মুনি ও ব্যাসদেবকে সঙ্গে নিয়েই দেবী জগদ্ধাত্রীর আরাধনা হয় জামালপুরের কালীতলার চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। প্রায় দেড়শো বছর ধরে ওই পুজো চলছে। পারিবারিক পুজো হলেও গ্রামবাসীরাও সামিল হন তাতে।
চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যেরা কর্মসূত্রে বছরের বেশির ভাগ সময়েই বাইরে থাকেন। তবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় সময়ে পরিবারের সকলে জামালপুরে পৈতৃক বাড়িতে মিলিত হন। সাবেক বাড়ির পাশেই রয়েছে দেবী জগদ্ধাত্রীর মন্দির। ওই পরিবারের কন্যা রুনা চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের বাড়ির প্রতিমাতেও বিশেষত্ব রয়েছে। একচালার ত্রিনয়নী দেবী প্রতিমার এক পাশে থাকেন মহাভারতের রচয়িতা ব্যাসদেব আর অপর পাশে থাকেন নারদ মুনি। কেন এই রীতি? রুনা বলেন, ‘‘পৌরাণিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী ব্যাসদেব ও নারদ মুনি দেবীর সেবক হিসাবে পরিচিত। জগদ্ধাত্রী পুজোর মন্ত্রেও নারদমুনি ও ব্যাসদেবের কথা উল্লেখ রয়েছে।’’ পরিবারের আর এক সদস্য সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেমন রীতি ও উপাচার মেনে পুজোর সূচনা করেছিলেন, সেই রীতি মেনেই পুজো হয়। শুধু নবমীর দিন ছাগ বলিদানের বদলে ছাঁচি কুমড়ো বলি দেওয়া হয়।’’ ওই দিন অন্নভোগেরও আয়োজন করা হয় মন্দির চত্বরে। দশমীর পুজো শেষে দামোদরে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
গ্রামে কোনও উৎসব ছিল না। তাই অন্যের বাড়িতে নিমন্ত্রণ পেলেও তাঁদের বাড়িতে এনে খাওয়ানোর কোনও সুযোগ ছিল না। সেই আক্ষেপ থেকেই জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করেন গুসকরা পুরসভার দোনাইপুরের বাসিন্দারা। সেই পুজো এ বার পঞ্চাশ বছরে পড়ল।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষিপ্রধান এই এলাকায় প্রায় চল্লিশটি পরিবারের বাস। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা নিমাইচন্দ্র পাল বলেন, “গ্রামে দুর্গা, কালী বা অন্য কোনও দেবদেবীর পুজো নেই। এটা আমাদের খুব আক্ষেপ ছিল। গ্রামবাসীরা বিভিন্ন জায়গায় পুজো দেখতে যেতেন। সেখানে প্রসাদ খেতেন। কিন্তু তাঁদের নিমন্ত্রণ করে বাড়িতে এনে খাওয়ানোর কোনও সুযোগ ছিল না আমাদের। তাই আমি, সন্ন্যাসী বজর, ধনেশ্বর পাল, ফকির পাল, সুখেশ্বর পালদের মতো কয়েক জন মিলে এই পুজো চালু করি।’’
আজ, মঙ্গলবার নবমীর দিন এক দিনে তিন বার পুজো হয়। কুমারি পুজোর রীতি থাকলেও না মানা হয় না। জগদ্ধাত্রীর নীচে হাতির মাথা থাকে। দু’পাশে থাকেন জয়া বিজয়া। পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের সমস্ত বাড়িতে আত্মীয় পরিজনেরা আসেন। সকলে মেতে ওঠেন। গ্রামবাসী সজল পাল বলেন, “আমাদের গ্রামে একটাই অনুষ্ঠান। পুজোয় দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়। গ্রামবাসীদের চাঁদাতেই পুজো হয়।’’ ভোগ বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন থাকে।