ইট, পাথরের ধুলোয় দম বন্ধ শহরের

আসানসোল, দুর্গাপুর শহর জুড়ে নির্মাণ কাজের রমরমা। সেই সঙ্গে বাড়ছে দূষণও। কী সমস্যায় পড়ছেন দুই শহরের বাসিন্দারা, প্রশাসনের ভূমিকা কী, খোঁজ নিল আনন্দবাজার।দুর্গাপুর পুরসভা এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেনাচিতি, ৫৪ ফুট ও শহর লাগোয়া শঙ্করপুর, আড়রা, বামুনাড়া প্রভৃতি এলাকায় মাথা তুলছে শত শত বহুতল।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:২৫
Share:

দুর্গাপুর পুরসভা এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেনাচিতি, ৫৪ ফুট ও শহর লাগোয়া শঙ্করপুর, আড়রা, বামুনাড়া প্রভৃতি এলাকায় মাথা তুলছে শত শত বহুতল। প্রতীকী ছবি।

শুধু শিল্প-কারখানা নয়, দূষণ ছড়ায় নির্মাণ শিল্প থেকেও। নির্মীয়মাণ বাড়ি বা রাস্তা নির্মাণের সময়ে দূষণ রোধে কী করতে হবে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আইনে তা বলা আছে। কিন্তু তা অনেকক্ষেত্রেই মানা হয় না বলে অভিযোগ। বহুতল নির্মাণে যুক্ত বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি পুরসভা বা পঞ্চায়েত এলাকায় রাস্তা বা কোনও সরকারি প্রকল্পের জন্য নির্মাণের সময়েও এই আইন না মানার অভিযোগ রয়েছে দুর্গাপুরে।

Advertisement

দুর্গাপুর পুরসভা এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেনাচিতি, ৫৪ ফুট ও শহর লাগোয়া শঙ্করপুর, আড়রা, বামুনাড়া প্রভৃতি এলাকায় মাথা তুলছে শত শত বহুতল। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে আবাসন শিল্প। পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন নতুন আবাসন গড়া হচ্ছে। পরিবেশকর্মীরা জানান, এই পরিস্থিতিতে এক বার বাড়ি ভাঙার সময়ে দূষণ ছড়াচ্ছে। তার পরে মাসের পর মাস ধরে নির্মাণকাজ চলাকালীন দূষণ ছড়াচ্ছে। সিমেন্ট, বালি, ভাঙা ইটের গুঁড়ো মিশছে বাতাসে। আবার নির্মাণ কাজের জন্য ডাঁই করে রাখা মাটির অংশবিশেষও বাতাসে উড়তে থাকে। ফলে বাড়ছে বায়ুদূষণ।

শহরের পরিবেশপ্রেমীরা জানান, নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রেখে, ইট ও পাথরে জল ছিটিয়ে, সিমেন্ট ব্যবহারের সময় সতর্কতা নিলে কিছুটা দূষণ রোধ সম্ভব। আবার কাজের সময়ে ত্রিপল ও পলিথিন দিয়ে নির্মাণ ঢেকে রাখার কাজ করার প্রথাও রয়েছে। কিন্তু অনেকেই এ সব করেন না বলে অভিযোগ। ফলে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ বাড়তেই থাকে। আবার, দুর্গাপুরের রাস্তা নির্মাণের সময়ও নির্মাণ দূষণ রোধে কোনও পদক্ষেপ করা হয় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের। শনিবার এমএএমসি টাউনশিপে গিয়ে দেখা গেল, মিক্সিং মেশিন, পিচ গলানোর যন্ত্র ও জেনারেটর একনাগাড়ে চলছে। নির্মাণ সামগ্রীর গুঁড়ো ও জেনারেটরের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দারা বলেন, ‘‘সকাল থেকে কাজ চলছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে।’’

Advertisement

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানায়, বাতাসে ১০ মাইক্রোমিটারের ছোট আকারের ভাসমান ধূলিকণার গড় স্বাভাবিক পরিমাণ হল, প্রতি ঘনমিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম। শিল্পতালুক থাকায় ও শহরের প্রায় মাঝ বরাবর চলে যাওয়া জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় এমনিতেই বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার হার অধিকাংশ সময়ে স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকে দুর্গাপুরে। আবাসন ও রাস্তা নির্মাণের কাজের জন্য সেই মাত্রা আরও বাড়ছে। চিকিৎসকেরা জানান, এমন দূষণে হাঁপানি-সহ শ্বাসনালী ও ফুসফুসের নানা রোগ বাড়ছে। সবথেকে বিপদের মধ্যে রয়েছেন নির্মাণকাজে যুক্ত শ্রমিকেরা।

নির্মাণস্থলের দূষণের জন্য সম্প্রতি জাতীয় পরিবেশ আদালতে জরিমানা দিতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এর পরেই কলকাতা পুরসভা এলাকায় ইমারতি সামগ্রী ঢেকে রাখা, কাজের সময় নির্মাণস্থলে আবরণ দেওয়ার মতো নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অভিযানও শুরু হয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুরের ক্ষেত্রে তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পর্ষদের দুর্গাপুরের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে চার জেলার কাজকর্ম পরিচালিত হয়। দফতর সূত্রেই খবর, কর্মী-সঙ্কট রয়েছে এখানে। পর্ষদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নির্মাণ দূষণ নিয়ে নিয়মিত অভিযান চালানোর পরিকাঠামো নেই। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’ তবে শেষ কবে নির্মাণ দূষণ নিয়ে অভিযোগ এসেছে তা মনে করতে পারেননি তিনি। ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ অনেকে জানেনই না নির্মাণ দূষণ নিয়ে পরিবেশ-বিধির কথা। তাই অভিযোগ হয় না।’’

দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র দিলীপ অগস্তি অবশ্য বলেন, ‘‘দূষণ হচ্ছে কি না, তা দেখে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। পুরসভার সেই পরিকাঠামো নেই। তবে ‘বিল্ডিং প্ল্যান’ অনুমোদনের ক্ষেত্রে নির্মাণ দূষণ রোধে পরিবেশবিধি মানা বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবা হচ্ছে। তা মানা না হলে তখন পর্ষদ ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি, নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement