শিশুর বাবাকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। — নিজস্ব চিত্র।
কিছুতেই কথা শুনছে না সন্তান। দিন দিন চঞ্চল হয়ে উঠছে, বাড়ছে দুষ্টুমিও। তাকে শায়েস্তা করতে সাধুবাবার দ্বারস্থ হয়েছিলেন বাবা, মা। সাধুর পরামর্শেই নয় বছরের শিশুকে তাঁরা ফেলে দিয়ে আসেন দামোদরের নির্জন, অন্ধকার চরে। রাতভর সেখানে কান্নাকাটি করে শিশুটি। বাবা, মা ফিরেও তাকান না। পরে এলাকার বাসিন্দারা শিশুর কান্না শুনে তাকে উদ্ধার করেন।
ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি এলাকার। শিশুকে হেনস্থার অভিযোগে তার বাবা, মা এবং দাদুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, শিশুর বাবা, মায়ের বাড়ি নদিয়ায়। দাদু থাকেন মেমারিতে। বুধবার রাতে রায়না থানা এলাকার সুদর্শনপুরে সাধুবাবার আশ্রম থেকে ওই শিশুর বাবা এবং মাকে গ্রেফতার করা হয়। দাদুকে পরের দিন সকালে আশ্রমলাগোয়া এলাকা থেকেই ধরে পুলিশ। তাঁদের বর্ধমান সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বাবাকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। মাকে শনিবার আবার আদালতে হাজির করানো হবে। ওই শিশুর দাদুকে বয়সের কথা মাথায় রেখে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেওয়া হয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ জানিয়েছে, শিশুটি এর আগে দু’বার অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সেই সময় তাঁকে সাধুবাবার আশ্রমে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা, মা। তাঁদের বিশ্বাস, সাধুবাবার কৃপায় শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠেছে। এর পর শিশুর দুষ্টুমির প্রবণতা কম করতে আবার আশ্রমের দ্বারস্থ হন দম্পতি। সেখান থেকেই শিশুকে নির্জন নদীর চরে রেখে আসার পরামর্শ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার রাতে সেই পরামর্শ মতোই রায়না থানার শিয়ালিবাজার এলাকায় নির্জন নদীর ধারে শিশুকে রেখে আসেন তাঁরা।
বাবা, মায়ের খোঁজে দামোদরের চরে উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করছিল শিশুটি। তার কান্নার শব্দ শুনে এলাকার লোকজন ছুটে যান। পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং শিশুটিকে উদ্ধার করে। তাকে শিশুকল্যাণ কমিটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তাঁরা শিশুটির বাবা, মায়ের উপর ভরসা রাখতে পারেননি। তাকে হুগলির একটি হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাবা, মা আশ্রমের সাধুর কথাতেই তাকে ফেলে এসেছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছে ওই শিশু।
শিশুর মা দেবস্মিতা বিশ্বাস জানান, আশ্রমের উপর তাঁদের অগাধ বিশ্বাস। এই আশ্রমের জন্যই তাঁদের সন্তান বেশ কয়েক বার বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। ছেলেকে ‘শান্ত’ করতে নদিয়া থেকে তাই আবার তাঁরা আশ্রমে ছুটে আসেন। পরামর্শ মতো কাজও করেন।
মনরোগ বিশেষজ্ঞ ওমপ্রকাশ সিংহ জানিয়েছেন, এই বয়সে শিশুর চাঞ্চল্য স্বাভাবিক। বাড়াবাড়ি কিছু হলে চিকিৎসা বিজ্ঞানেই তার সমাধান রয়েছে। অন্ধবিশ্বাস দূর করার ডাক দিয়েছেন তিনি।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের বর্ধমান শাখার কার্যকরী সভাপতি চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিশুদের মন সব সময় চঞ্চল প্রকৃতির। অন্ধবিশ্বাসের কবলে পড়লে সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে তা আরও জটিল হয়ে ওঠে। আসলে এগুলি মানসিক বিকার। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’’ জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানান, পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রশাসনের তরফে এলাকায় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হবে।