ফাঁকা পড়ে পঞ্চায়েতের কর্তাদের চেয়ার। নিজস্ব চিত্র
প্রশাসনিক সভায় রয়েছেন জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী। রয়েছেন এই এলাকা থেকেই জেতা জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়াও। কিন্তু গরহাজির খণ্ডঘোষের দশটি পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, সদস্যেরা। প্রায় প্রত্যেকেরই দাবি, ‘পেটের গোলমালের’ জেরেই এই ‘বয়কট’। তবে বিরোধীদের কটাক্ষ, জেলাশাসকের কাছে নানা প্রকল্পের হিসেব দেওয়া বা ‘অস্বস্তিকর’ প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ‘আশঙ্কা’ থাকাতেই এমন ছবি দেখা গিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিটি জনসভায় জেলা প্রশাসনকে ‘জন-মন’ বুঝতে গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে পঞ্চায়েতে কতটা কাজ হচ্ছে, তা জানতেই মঙ্গলবার থেকে এই ধরনের সভা শুরু করেছেন জেলাশাসক।
প্রশাসন সূত্রে খবর, সভা শুরুর পরে জেলাশাসক একটিও পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানদের দেখা না পেয়ে বিষয়টি নিয়ে বিডিও (খণ্ডঘোষ) কমলকান্তি তলাপাত্রের কাছে খোঁজ নেন। বিডিও দাবি করেন, ‘‘সবাইকে ঠিক সময়ে বৈঠকের কথা জানানো হয়েছিল।’’ সভায় থাকা শম্পাদেবীও বলেন, ‘‘ওঁরা কেন নেই, তা জানার জন্য বিডিও-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিতকুমার বাগদি, সহ-সভাপতি শ্যামলকুমার দত্ত-সহ বেশির ভাগ সদস্য বৈঠকে গরহাজির ছিলেন। অসিতবাবুর মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি। সহ-সভাপতির দাবি, “পেটের গোলমালের জন্যে বৈঠকে যেতে পারিনি।’’ একই ‘গোলমালের’ জেরে গরহাজিরা, দাবি করেন শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জাহাঙ্গির খান, কৈয়রের প্রধান সাজাহান মণ্ডল, শাঁকারি ১ পঞ্চায়েতের প্রধান শিউলি খাঁ’রা। খণ্ডঘোষের উপপ্রধান হারুন সাঁতরার অবশ্য দাবি, “আমাদের এলাকায় জেলাশাসক এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গেই ছিলাম। আচমকা পেটের গোলমাল শুরু হয়। তাই যেতে পারিনি। তার পরে আবার নাতিকে নিয়ে বর্ধমান যেতে হয়েছিল।’’ বেশ কয়েকজন প্রধান ও উপপ্রধানের মোবাইল বন্ধ থাকায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
কিন্তু গরহাজিরার এমন সরকারি ‘কারণ’ প্রকাশ্যে আসতেই নানা মত সামনে আসছে। তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন আধিকারিক বা কর্মীদের একাংশ প্রধান, উপপ্রধানদের সঙ্গে ‘সহযোগিতা’ করছেন না। ফলে, কাজের গতি হারাচ্ছে। যে সব কর্মী-আধিকারিক ‘অসহযোগিতা’ করছেন, তাঁদের বদলির জন্য মৌখিক ও লিখিত ভাবে জেলা প্রশাসনের কাছে দাবিও জানিয়েছিল সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি। এ ছাড়াও খণ্ডঘোষ ব্লক তৃণমূল চিঠি দেয়। কিন্তু সেই সব দাবির বেশির ভাগই ‘অন্যায্য’ বলে মনে করেছে জেলা প্রশাসন। এর পরেই দলের ব্লক স্তর থেকে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ‘অসহযোগিতা’র নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে জল্পনা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান, উপপ্রধানদের দাবি, “পঞ্চায়েতের সদস্যদের নিয়ে জেলাশাসকের বৈঠকে হাজির হব বলে তৈরি হচ্ছিলাম। সেই সময় দলীয় নেতারা কার্যত ‘হুমকি’ দিয়ে সভায় যেতে নিষেধ করেন।’’ যদিও জেলা পরিষদের সদস্য তথা তৃণমূলের খণ্ডঘোষ ব্লকের সভাপতি অপার্থিব ইসলামের দাবি, ‘‘আমি একটা কাজে গলসিতে গিয়েছিলাম। জেলাশাসকের সভায় কারা যাননি, কেন যাননি, তা আমি কি করে বলব? চাষের কাজ চলছে বলে হয়তো অনেকে যেতে পারেননি।’’
যদিও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য মাফুজ হোসেনের কটাক্ষ, “অস্বস্তিকর প্রশ্নের জবাব দিতে পারবেন না বলেই হয়তো সভায় যাননি ওই সব কর্মকর্তারা।’’ আর বিজেপির খণ্ডঘোষের পর্যবেক্ষক বিজন ঘোষ মনে করেন, “বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখেছেন জেলাশাসক। তিনি সে সব প্রকল্পের হিসেব চাইতে পারেন, এই ভয়েই ওঁরা সভায় যাননি।’’
তবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও এই চিত্র কেন, সে বিষয়ে ‘খোঁজখবর’ করার আশ্বাস দেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।