এই ফর্ম ঘিরে তরজা। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটে কাঁকসা ব্লক এলাকায় তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার জন্য সমাজমাধ্যমে ঘুরছে একটি ফর্ম (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার)। ওই আবেদপত্রে নানা তথ্যের পাশাপাশি, ‘স্বীকারোক্তি’ বলে একটি অংশে লেখা, ‘আমি বা আমার পরিবারের কোনও সদস্য কোনও প্রকার দুর্নীতির সঙ্গে বা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত নই’! বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে তৃণমূলকে বিঁধছেন বিরোধীরা। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ‘পুরোটাই চক্রান্ত’।
ওই আবেদনপত্রে দেখা যাচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মহিলাকে নিজের নাম, ঠিকানার মতো নানা বিষয় জানাতে হবে। সে সঙ্গে ‘স্বীকারোক্তি’ অংশে মোট ছ’টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে সিন্ডিকেটে বা দুর্নীতিতে যুক্ত নন বলার পাশাপাশি, দলের প্রতি ‘আনুগত্য’ জানানো, দলের ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষা, পূর্বে অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত কি না এমন নানা কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বিরোধীদের দাবি, কাঁকসায় তৃণমূলের এখন এমন অবস্থা যে আবেদনপত্র চাইতে হচ্ছে দলীয় কর্মীদের থেকে। ঘটনা হল, গত পঞ্চায়েত ভোটে কাঁকসার সাতটি পঞ্চায়েতের প্রতিটিতেই জিতেছিল তৃণমূল। বিরোধীরা সন্ত্রাসের অভিযোগ করলেও, তৃণমূল তা মানেনি। কিন্তু কাঁকসায় তৃণমূলের কোন্দল দীর্ঘদিনের বলেই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের। ওই মহলটিই মনে করিয়ে দিচ্ছে, গত নির্বাচনে দলের তরফে ভোট পরিচালনার দায়িত্ব কাঁকসার কোনও নেতার বদলে দুর্গাপুরের দুই নেতাকে দেওয়া হয়েছিল। দীর্ঘদিন ব্লকে কোনও সভাপতি ছিলেন না। পাশাপাশি, শিক্ষা-দুর্নীতি, আবাস-ক্ষোভের মতো নানা বিষয় নিয়ে এলাকায় দল সম্পর্কে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূলের প্রবীণ কয়েক জন নেতা। এই আবহেই এমন ফর্ম ছাপানো হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। যদিও, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “দলের অঞ্চল সভাপতিদের বিভিন্ন এলাকায় স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ব্যক্তিদের খোঁজ করতে বলা হয়েছে। তবে কোথাও ফর্ম ছাপানোর কথাবলা হয়নি।”
তবে এর পরেও সরব হচ্ছেন বিরোধী নেতৃত্ব। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, “পুরো দলটাই দুর্নীতিতে যুক্ত। ওই ফর্মে লেখা উচিত ছিল, আপনি নতুন কী কী পন্থায় চুরি করতে পারবেন, সে তথ্য দিন! আসলে ওঁরা প্রার্থী বাছাই করতে পারছেন না।” এ দিকে, বিজেপি নেতা রমন শর্মার দাবি, “এ ভাবে ফর্ম বিলির অর্থ, ওঁদের দলের সবাই চোর। কারও উপরে নিয়ন্ত্রণ নেই।” যদিও তৃণমূল নেতা ভবানীর বক্তব্য, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। তবে কেউ বা কারা চান না, দলে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির লোক থাকুন। এটা পুরোটাই চক্রান্ত।”