টিভিতে বাজেট পেশ দেখা। দুর্গাপুরের আশিসনগর কলোনিতে। ছবি: বিকাশ মশান ।
কেন্দ্রের অন্তর্বর্তী বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পশ্চিম বর্ধমানের শিল্প মহলের। বিজেপির দাবি, দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়া এই বাজেট সুদূরপ্রসারী লাভের বাজেট। তবে বিরোধীরা এই বাজেটকে ভোটের উদ্দেশ্যে বাজেট বলে কটাক্ষ করেছে।
বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট পেশ করার পরেই রানিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের মুখ্য উপদেষ্টা রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান অভিযোগ করেন, বাজেটে স্বনির্ভরতার কোনও ছাপ পড়েনি। তাঁর দাবি, দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে যুব সমাজের সরাসরি যোগদান প্রয়োজন। যুব সমাজকে স্বনির্ভর করতে ছোট-মাঝারি শিল্পে উৎসাহ দিতে হবে, যা এ বারের বাজেটে নেই বলে তাঁর দাবি। রাজেন্দ্রপ্রসাদ বলেন, ‘‘তবে অন্তর্বর্তী বাজেট বলে হয়তো সে সব উপেক্ষা করা হয়েছে।’’
এই বাজেট মূলত গত ১০ বছরের কেন্দ্রীয় সরকারের সাফল্য তুলে
ধরার বাজেট বলে মনে করছেন সিমেন্ট শিল্পের কর্ণধার পবন গুটগুটিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘বাজেটে পরিকাঠামো উন্নয়নে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তাতে শিল্প-বাণিজ্যের সরাসরি কোনও লাভ নেই। দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হলে পরিকাঠামো এমনিতেই উন্নতি হবে। সে জন্য শিল্প-বাণিজ্যে বেশি বিনিয়োগের সুযোগ করতে হবে, যা এই বাজেটে নেই।’’ ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সাধারণ সম্পাদক ও নির্মাণশিল্প ব্যবসায়ী
শচীন রায়ের বক্তব্য, ‘‘গৃহঋণে সুদ কমায় নির্মাণশিল্পের উন্নতির পাশাপাশি, নির্মাণ সামগ্রী উৎপাদন ও বিক্রি বাড়বে।’’ তাঁর আরও দাবি, এই বাজেট দেশের গরিব মানুষকে
সুবিধা দেবে, যা আখেরে অর্থনীতির জন্য ভাল।
অন্তর্বর্তী বাজেটে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ক্ষেত্রে ঋণদান ব্যবস্থার সংস্কার করে এই প্রকল্পে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রগুলিকে বন্ধক ছাড়াই মোট ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া ও ঋণের সুদ ১ শতাংশ হারে কমানোর কথা বলা হয়েছে। যদিও ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ় অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রাক্তন সভাপতি কৃপাল সিংহ বলেন, ‘‘এমন ঘোষণা আমরা আগেও শুনেছি। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা অন্য। বন্ধক ছাড়া ব্যাঙ্ক ঋণ দিতে রাজি হয় না। পরিস্থিতি পাল্টালে ভাল।’’
বাজেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নেতারা। সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরীর দাবি, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের উন্নতির কথা বলাই হয়নি। ফলে শ্রমিক কল্যাণের প্রসঙ্গও আসেনি। ভবিষ্যতে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বিক্রির পথ খোলা রাখা হয়েছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীরও দাবি, ‘‘এই বাজেট অন্তঃসারশূন্য ও দিশাহীন।’’ বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল অবশ্য বলেন, ‘‘মহিলা ও যুব সমাজের উন্নতি, গ্রামাঞ্চলে গরিব মানুষের মাথায় ছাদ তোলা, পরিকাঠামো উন্নয়নের এই বাজেট হবে সুদূরপ্রসারী।’’