সাইকেলে ফিরে নিজের কারখানায় কানাইবাবু। ছবি: সুদিন মণ্ডল
দু’মাস আগে মূর্তি গড়তে উত্তরপ্রদেশ গিয়েছিলেন ভাতারের কাশীপুরের ষাটোর্ধ্ব কানাইচন্দ্র পাল। ‘লকডাউন’-এ থমকে যায় সে কাজও। মাসখানেক অপেক্ষা করেও বাড়ি ফেরার উপায় না পেয়ে সাইকেল নিয়েই ৮০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ফেলেছেন ওই বৃদ্ধ। মঙ্গলবার ভোরে ভাতারে পৌঁছেছেন তিনি। কিন্তু বাড়ির ভিতরে নয়, স্বেচ্ছায় নিজের মূর্তি তৈরির কারখানাতেই নিভৃতবাসে রয়েছেন।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় বলেন, ‘‘উনি স্বেচ্ছায় হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন শুনে ভাল লাগল। ওঁর কথা আমরা তুলে ধরব।’’ ভাতারের বিডিও শুভ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নিয়মিত ওই বৃদ্ধের শারীরিক পরীক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে বলা হয়েছে। এ ছাড়া, কোনও রকম সমস্যা হলে প্রশাসন ওই ব্যক্তির পাশে থাকবে।’’
ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে বেশির ভাগ লোকই ঘরে থাকতে চাইছেন না বলে অভিযোগ স্বাস্থ্যকর্মীদের। কেউ মোটরবাইক নিয়ে ঘুরছেন, কেউ বাজারে-পাড়ার মোড়ে আড্ডা দিচ্ছেন। সেখানে স্বেচ্ছায় এমন সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় আশাকর্মীরা। তাঁদের দাবি, যেখানে বাড়ি-বাড়ি ঘুরে আলাদা থাকা, ‘মাস্ক’ পরার কথা পইপই করে বোঝাতে হচ্ছে, সেখানে এক জন বয়স্ক মানুষের এমন কাজ আদর্শ। আর কানাইবাবুর কথায়, “স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা করেছেন। তাঁরা আমাকে বাড়িতে আলাদা করে থাকার কথা বলেননি। কিন্তু আমার মনে হয়েছে, নিজের জন্য বাকিদের কেন বিপদে ফেলব? আমি পরিবারের দায়িত্ব এড়াতে পারি না।”
ওই বৃদ্ধ জানান, উত্তরপ্রদেশের সিদ্ধার্থনগর জেলার আজাদনগর গ্রামের একটি কারখানায় গত কয়েক বছর ধরেই দুর্গামূর্তি-সহ অন্য মূর্তি গড়তে যান তিনি। মার্চের গোড়া থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাজ করে ২৫-৩০ হাজার টাকা আয় করেন। সেই পুঁজি দিয়ে বাড়িতে ঠাকুর গড়েন। তবে এ বার আর আয় তেমন হয়নি। সোমবার কানাইবাবু বলেন, ‘‘লকডাউনে কাজ হারিয়েছি। কারখানার মালিক আমাদের বেশি টাকা দিতে পারেননি। খাবারও ঠিকমতো পাচ্ছিলাম না। বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করছিলাম। হেঁটেও ফেরার পরিকল্পনা করি। শেষে কারখানার মালিক সাইকেল যোগাড় করে দেন।’’ তিনি জানান, সপ্তাহখানেক আগে এক রাতে তিন জন মিলে রওনা দেন। সোমবার সকালে গুসকরার হিমঘরের কাছে পরিজনেরা তাঁদের মোটরভ্যানে তুলে নিয়ে আসেন। কানাইবাবুর ছোট ছেলে অনুপবাবু বলেন, ‘‘বাবা ফিরে আসায় দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে।’’
ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য বাসুদেব যশ বলেন, “ঠাকুর গড়তে গিয়েছিলেন কানাইবাবু। সেখান থেকে ফিরে সেই ঠাকুর তৈরির ঘরেই ঠাঁই নিয়েছেন। ওঁর জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’