সিটি সেন্টারের একটি বারোয়ারি গণেশ পুজোয়। নিজস্ব চিত্র
শিল্পাঞ্চলে বারোয়ারি পুজোয় গণেশ আরাধনা যে একেবারেই হত না, তা নয়। কিন্তু গত এক দশকে, বিশেষত গত চার-পাঁচ বছরে বারোয়ারি গণেশ পুজোর চল অনেকটাই বেড়েছে শিল্পাঞ্চলে। প্রতি বছর সে সংখ্যাটা লাফিয়ে বাড়ছে, জানাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরাও। কেন এমনটা, তা নিয়ে রয়েছে নানা জল্পনা। তবে, জল্পনায় জল ঢেলে উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণ মানুষের চাহিদাতেই এই চলশুরু হয়েছে।
দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের ‘সিদ্ধি বিনায়ক পুজো কমিটি’র তরফে, কয়েক জন ব্যবসায়ী গণেশ পুজো করছেন। বাজেট দু’লক্ষ টাকা। ব্যবসায়ীরা নিজেরাই এই টাকা দেন। উদ্যোক্তাদের তরফে, শুভজ্যোতি ভাদুড়ী জানাচ্ছেন, মূলত ব্যবসায়ীদের ইচ্ছেতেই ন’বছর ধরে এই পুজো হচ্ছে। বিধাননগর সুকান্ত শিশু উদ্যানের পুজোটি পাড়ার বাসিন্দাদের চাহিদাতে গত দশ বছর ধরে হচ্ছে, জানাচ্ছেন উদ্যোক্তা সুমন বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিকে, আসানসোলে খোঁজ নিয়ে বেশ কয়েকটি নতুন বারোয়ারি গণেশ পুজোর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ মতাদর্শ প্রভাবিত লোকজনের যোগসূত্রও পাওয়া যাচ্ছে সে সব পুজোয়। আপার চেলিডাঙায় শিবম ক্লাব পুজো করছে বছর ছয়েক ধরে। পাঁচ দিনের পুজো ও অনুষ্ঠান ঘিরে বাজেট ৮০ হাজার টাকা। এই ক্লাবের সভাপতি আসানসোলের অন্যতম ‘ডেপুটি মেয়র’ তথা তৃণমূল নেতা অভিজিৎ ঘটক। আবার, রানিগঞ্জ কুমারবাজারে ২০১৩-য় ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ প্রভাবিত শিবাজী সঙ্ঘ পুজো শুরু করেছে। যদিও, অভিজিৎ ও শিবাজী সঙ্ঘের শুভম রাউতদের বক্তব্য, “পুজোর সঙ্গে রাজনীতির যোগাযোগ নেই। মানুষের চাহিদাতেই পুজো হয়।”সে সঙ্গে, শুভম অবশ্য এ-ও জানিয়েছেন, রানিগঞ্জে শহরে সীতারামজি ভবন ছাড়া আগে সেভাবে কোথাও বারোয়ারি গণেশ পুজো হত না। একই ভাবে বার্নপুরের নিউটাউনে পুজোর চলই ছিল না। অথচ, ২০১৮-য় নিউটাউন নেতাজি সঙ্ঘের উদ্যোগে শুরু হয় গণেশ পুজো। অন্যতম আয়োজক তাপস চট্টরাজের দাবি, এ ক্ষেত্রেও এলাকাবাসীর দাবিই মূল।
পাশাপাশি, জাঁকজমকের সঙ্গে শিল্পাঞ্চলের পুরনো পুজোগুলিও হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে, দুর্গাপুর স্টেশন বাজারের আলাপ ক্লাব, আসানসোল বাজার এলাকার হনুমান মন্দিরে ‘মহাবীর স্থান গণেশ পুজো কমিটি’, অন্ডালের কাজোড়ার নবীন সঙ্ঘ-সহ বেশ কয়েকটি পুজো। পুরনো পুজো কমিটিগুলির সূত্রে জানা যাচ্ছে, এক দশকের মধ্যে জেলায় অন্তত চারশোটি বারোয়ারি গণেশ পুজো হচ্ছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলাকান্তমও বলেন, “আমাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, এ বছর জেলায় তিনশোরও বেশি বারোয়ারি গণেশ পুজো হচ্ছে।”
পাশাপাশি, বারোয়ারি গণেশ পুজোর চল যে বেড়েছে, তা জানাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরাও। রানিগঞ্জের মৃৎশিল্পী ঈশ্বর পাল, নীরঞ্জন পালেরা বলেন, “সাত বছর আগে বিস্তীর্ণ খনি এলাকায় দু’-তিনটির বেশি বারোয়ারি গণেশ পুজো হত না। প্রতি বছর সংখ্যাটা বাড়ছে। পাঁচ বছর আগেও আমরা চার-পাঁচটা মূর্তি বিক্রি করতাম। এ বার সেই সংখ্যাটা দশ গুণেরও বেশি।” বারোয়ারি গণেশ পুজোর চল বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন ডেকরেটরেরাও। ‘পশ্চিম বর্ধমান জেলা ডেকরেটর সমন্বয় কমিটি’র তরফে শিবাজী বসু, পার্থ আচার্যেরা বলেন, “এখন বিশ্বকর্মা পুজোর আগে গণেশ পুজো আমাদের আয়ের বড় উৎসহয়ে দাঁড়িয়েছে।”