দেদার ব্যবহার প্লাস্টিকের। নিজস্ব চিত্র।
স্মার্ট সিটি হয়ে উঠতে গেলে শহরকে হতে হবে প্লাস্টিক মুক্ত। অন্যান্য শহরের সঙ্গে প্রতিযোগিতার দৌড়ে টিকে থাকতে দুর্গাপুরে নিষিদ্ধ করা হয় প্লাস্টিকের ব্যবহার। নিয়ম না মানলে জরিমানাও করা হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু ভোট-মরসুম পড়তেই প্লাস্টিক বন্ধে অভিযান প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের। ঢিলেঢালা নজরদারির সুযোগে শহরের বিভিন্ন বাজারে দেদার প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার হচ্ছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। তবে প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের একাংশের দাবি, নাগরিক সচেতনতার অভাবের কারণেই প্লাস্টিকের এমন বহুল ব্যবহার।
পরিবেশ দফতরের নিয়ম অনুসারে ৪০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক প্যাকেট ব্যবহার করা যায় না বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। অথচ দুর্গাপুরের মুচিপাড়া, মামরা, বিধাননগর, চণ্ডীদাস, বেনাচিতি প্রভৃতি বাজারে এমনকী পুরসভার নাকের ডগায় সিটি সেন্টারের সমস্ত দোকানেও রমরমিয়ে চলছে ৪০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক প্যাকেটের ব্যবহার।
প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের একাংশের অবশ্য দাবি, নাগরিক সচেতনতার অভাবেই প্লাস্টিক ব্যাগের এমন বহুল ব্যবহার। আগে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলা যায়নি। প্রথম দিকে জরিমানার ভয়ে দিন কয়েক প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ ছিল। কিন্তু ভোট-মরসুম পড়তেই ফের ৪০ মাইক্রনের কম পুরু প্লাস্টিক বাজারে ফিরেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, প্লাস্টিক ব্যাগই বেশি পছন্দের ক্রেতা-বিক্রেতা, উভয়েরই। যেমন, আইনস্টাইন-জেসি বোস রোড বস্তি এলাকার বাসিন্দা চিনু হেমব্রম। তিনি বলেন, ‘‘বাজারে গেলে কিছু কিনলেই প্লাস্টিক ব্যাগে জিনিসপত্র ভরে দেন দোকানি। ভালই তো। টেকসই, আনতেও সুবিধে।’’ শহর ঘুরে দেখা গেল প্লাস্টিক বন্ধে নাগরিক সচেতনতারও অভাব রয়েছে। ইস্পাত নগরীর এ জোনের বাসিন্দা সুনয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দোকানে প্লাস্টিক দেয়। আমরাও আর সে ভাবে বারণ করি না।’’
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, এ ধরেনর প্লাস্টিকে ভূমি-দূষণ ছড়ায় বিপজ্জনক ভাবে। অনেক সময় নর্দমাতেও প্লাস্টিক ব্যাগগুলি জড়ো হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থাও বেহাল হয়ে পড়ে বলে জানান বাসিন্দারা। ঝাণ্ডাবাগের বাসিন্দা সুব্রত ভট্টাচার্যের মনে পড়ে, ‘‘এই তো বছর দুয়েক আগে তামলার নালায় প্লাস্টিক জমে মজে যাওয়ায় বেনাচিতি বাজার এলাকা সহ বহু জায়গা প্লাবিত হয়।’’
প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার যে এক ধরনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, সে কথা স্বীকার করেছেন একাধিক বাসিন্দা। সিটি সেন্টারের নন-কোম্পানি এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা সমরেশ মল্লিক বলেন, ‘‘আগে তো আমরা পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের প্যাকেট, মাটির হাড়ি, শালপাতা এসবেই বাজার সেরেছি। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়েই প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু হয়েছে। এত সহজে কি ছাড়া যাবে!’’ দোকানিরা আবার প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের যাবতীয় দায় চাপাচ্ছেন ক্রেতাদের ঘাড়েই। তাঁদের কথায়, ‘‘ক্রেতারা পছন্দ করেন, তাই প্লস্টিক ব্যগই দিয়ে থাকি।’’
পুরসভার সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিকের অবশ্য আশ্বাস, ভোট মিটে গিয়েছে। ফের নজরদারি শুরু হবে।