প্রতীকী ছবি।
রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে জ্বলজ্বল করছে ‘আমার ফসল আমার গাড়ি’ প্রকল্পটির কথা। কিন্তু জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দু’বছর ধরে প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান-সহ গোটা রাজ্যে। যদিও, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারের দাবি, আবেদন ‘কম’ জমা পড়ায় এই হাল। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যে অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। কিন্তু সময় গড়ালে এই হালই হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পটিতে উৎপাদিত আনাজ যাতে চাষিরা নিজেরাই বিক্রি করতে পারেন, সে জন্য তাঁদের ভ্যান দেওয়া হত। পাশাপাশি, এই প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত চাষিদের ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের সুবিধা মিলছে না।
কিন্তু কেন এমন অবস্থা? মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপবাবুর দাবি, ‘‘এই প্রকল্পে অবেদন বেশি জমা পড়েনি। তাই এই হাল।’’ যদিও, জেলা কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা ছিল ৩৮ জন করে।
এ দিকে, কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর-ফরিদপুর, কাঁকসা, সালানপুর-সহ কয়েকটি ব্লকে প্রায় পাঁচ হাজার একর জমিতে আনাজ চাষ হয়। আনুমানিক হাজার দশেক কৃষক আনাজ চাষ করেন। তেমনই কয়েকজন কাঁকসার অমিত চৌধুরী, সাধন ঘোষেরা জানান, এই প্রকল্পটির সুবিধা সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল ছিলেন না। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘সরকারের তরফে কোনও প্রচার করা হয়নি।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা বছরের বেশির ভাগ সময়ে আনাজ চাষ করি। সরকারি ভাবে ভ্যান মিললে সেই আনাজ বাজারে নিয়ে যেতে সুবিধা হবে। পাশাপাশি, ফাঁকা সময়ে আমরা স্থানীয় বাজারে আনাজও বিক্রি করতে পারব।’’
যদিও ‘প্রচারের অভাবের’ কথা স্বীকার করেননি কৃষি বিপণন দফতর। দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তার দাবি, ব্লকে-ব্লকে স্থানীয় ভাবে প্রকল্পটির যথেষ্ট প্রচার করা হয়েছে। দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর দিলীপ মণ্ডলও বলেন, ‘‘এই প্রকল্প থেকে অনেক চাষিই
উপকৃত হয়েছেন।’’
কৃষকসভার জেলা সহ-সম্পাদক রঞ্জিত দত্তের দাবি, ‘‘প্রান্তিক চাষিরা আদৌ এ সব প্রকল্পের বিষয়ে জানেন না। কবে তা চালু হল, কবেই বা বন্ধ হল, একমাত্র তৃণমূল জানে।’’ বিজেপি নেতা রমন শর্মার অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল কৃষি আইনের বিরোধিতা করে। কিন্তু আবার নিজের রাজ্যেই কৃষকের জন্য প্রকল্প বন্ধ রাখে। এর থেকেই কৃষক-স্বার্থ নিয়ে তৃণমূলের দ্বিচারিতা স্পষ্ট।’’ যদিও কাঁকসার তৃণমূল নেতা দেবদাস বক্সী বলেন, ‘‘সরকার চাষিদের স্বার্থরক্ষায় নানা পদক্ষেপ করেছে। বিরোধীরা অপপ্রচার করছে।’’
কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপবাবুর অবশ্য আশ্বাস, ‘‘আমাদের কাছে বেশি আবেদন জমা পড়লে ফের ওই প্রকল্পের সুযোগসুবিধা দেওয়া হবে।’’