পথ দাপাচ্ছে বেপরোয়া ‘ধুম’

খোলা মাথা, ছুটছে ভিজে বাইক

বেলা ১১ টা ৫— বাদলা দিৃন। লম্বা লাইন ঢলদিঘির পেট্রোল পাম্পে। বেশির ভাগ মাথা হেলমেটবিহীন। কিন্তু মোটরবাইকে বা স্কুটিতে তেল ভরার সময় হাতে ঠিক একটা কালো রঙের ছোট হেলমেট। এল কোথা থেকে? ভাল করে নজর ঘোরাতেই দেখা গেল একটাই হেলমেট ঘুরছে এ হাত-সে হাত।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৬ ০০:৩৪
Share:

ঢলদিঘির পেট্রোল পাম্পে হাত ঘুরছে একটাই কালো হেলমেট। ছবি: উদিত সিংহ।

বেলা ১১ টা ৫— বাদলা দিৃন। লম্বা লাইন ঢলদিঘির পেট্রোল পাম্পে। বেশির ভাগ মাথা হেলমেটবিহীন। কিন্তু মোটরবাইকে বা স্কুটিতে তেল ভরার সময় হাতে ঠিক একটা কালো রঙের ছোট হেলমেট। এল কোথা থেকে? ভাল করে নজর ঘোরাতেই দেখা গেল একটাই হেলমেট ঘুরছে এ হাত-সে হাত।

Advertisement

বেলা ১২টা— জিটি রোডের উপর একটি পেট্রোল পাম্পে গিয়ে দেখা গেল বৃষ্টির মধ্যেই পরপর সাঁ সাঁ করে ঢুকছে মোটরবাইক। বৃষ্টিতে ভেজা মাথায় হেলমেট নেই কারও। মোটরবাইক দাঁড় করাতেই, পেট্রোল পাম্পের কর্মী জানিয়ে দিলেন, রবিবার রাতে পুলিশ জানিয়ে দিয়ে গিয়েছে, হেলমেট ছাড়া তেল দেওয়া দেওয়া যাবে না। অগত্যা ওই যুবকেরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কয়েকজন মোটরবাইক আরোহীর কাছে হেলমেট ধার করে তেল ভরলেন।

দুপুর পৌনে ১টা— শহরের মেহেদিবাগান থেকে গোলাপবাগ মোড় যাওয়ার পথে বেশ কয়েকটি পেট্রোল পাম্প রয়েছে। সেখানেও মোটরবাইকে তেল ভরতে আসা নারী-পুরুষদের আকুতি, ‘দাদা, একটু হেলমেটটা দিন না। তেল ভরেই ফেরত দিয়ে দিচ্ছি।’

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে মোটরবাইক নিয়ন্ত্রণে নেমেছে কলকাতা পুলিশ। বর্ধমান জেলা পুলিশও ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ ফ্লেক্স, ব্যানার টাঙিয়েছে জেলার নানা পেট্রোল পাম্পে। পাম্প মালিকদের মৌখিত ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ জানানোও হয়েছে। কিন্তু সোমবার, ঝিরঝিরে বৃষ্টির দিন প্রমাণ করে দিল, যে যাই বলুক বর্ধমান শহরের মোটরবাইক চালকদের একটা বড় অংশ হেলমেটে অনভ্যস্তই।

অনভ্যস্ত আরোহীদের প্রতি ‘সহৃদয়’ হতেও দেখা গেল অনেক পাম্পের কর্মীদের। অপেক্ষা করেও হেলমেট জোগাড় করতে না পারা আরোহীদের কিছুক্ষণ আটকে রেখেতেল দিয়ে ছেড়ে দিলেন তাঁরা। প্রশ্ন করলে তাঁদের জবাব, ‘‘আমাদের কাজ হচ্ছে সচেতন করা। অনেকেই শহরে বিপদে-আপদে আসেন। তাঁদেরকে তেল দেব না বলাটা অমানবিক। সে জন্য সচেতন করার পর তেল দিয়ে দিয়েছি।”

জেলা পেট্রোল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন অবশ্য পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। ওই সমিতির সদস্য অভিজিৎ হাজরা বলেন, “এখনও কাছে কোনও লিখিত নির্দেশ আসেনি। সে জন্য তেল দেব না বলতে পারি না আমরা। তবে মোটকবাইক চালকদের কাছে হেলমেট পড়ার জন্য আবেদন করা হচ্ছে।”

তবে পুলিশের নজরদারিতে গাফিলতিও নজরে এসেছে। এ দিন দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপর জোৎরামের কাছে এক দল কলেজ পড়ুয়া স্কুটি চালিয়ে ভিজতে ভিজতে যেতে দেখা যায়। উল্লাস মোড়ে দেখা যায় হেলমেটহীন অবস্থায় বাবাকে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এক তরুণী। বিসি রোড, কার্জন গেট, জিটি রোড সর্বত্রই এক দৃশ্য। এমনকী রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের পাশ দিয়ে হেলমেটহীন অবস্থাতে ছুটতে দেখা গিয়েছে বাইক। পেট্রোল ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের দাবি, এই উদ্যোগকে সফল করতে হলে মাঝেমধ্যে পুলিশকে পেট্রোল পাম্পে হানা দিতে হবে। তা না হলে পাম্পের কর্মীদের সঙ্গে গোলমাল লেগেই থাকবে।

তাঁরাই জানান, বছর খানেক আগে জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন এ রকম উদ্যোগ নিয়েছিলেন। নির্দেশ ছিল, হেলমেট না থাকলে পেট্রোল মিলবে না। পাম্পের কর্মীরা সেই নির্দেশ মানতে শুরুও করেছিলেন, কিন্তু প্রতিদিনই গোলমাল হচ্ছিল। তা ছাড়া পেট্রোল পাম্পের পাশেই ৫ টাকায় হেলমেট ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছিল। যদিও এ বার তেমনটা হবে না বলেই মনে করছেন পুলিশ কর্তারা। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “মাস খানেক ধরে সচেতন করা হবে। তারপর পেট্রোল পাম্প থেকেই হেলমেটহীন বাইক চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement