—প্রতীকী চিত্র।
বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ কাণ্ডে এ রাজ্য থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করল এনআইএ। এই ঘটনা উস্কে দিচ্ছে বছর দশেক আগে বর্ধমানে ঘটে যাওয়া খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের স্মৃতি।
২০১৪ সালের ২ অক্টোবর দুর্গাপুজোর অষ্টমীর দুপুরে বর্ধমান শহর লাগোয়া খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মৃত্যু হয় দু’জনের। দেহ তুলতে গিয়ে ঘরে কিছু নথিপত্র পায় পুলিশ। সেখান থেকে জঙ্গি-যোগ সন্দেহ করে পুলিশ। ঘটনার তদন্তভার নেয় সিআইডি। পরে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করে তদন্তভার নেয়। ঘটনায় উঠে আসে জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ (জেএমবি)-এর নাম। তদন্ত শেষে তিন জন বাংলাদেশি-সহ ৩২ জনের নামে চার্জশিট জমা দেয় এনআইএ। ৩০ জনের সাজা ঘোষণা করেছে এনআইএ-র বিশেষ আদালত। এনআইএ-র খাতায় দু’জন এখনও পলাতক।
বেঙ্গালুরুতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অভিযুক্তেরা যেমন এ রাজ্যে এসে লুকিয়ে ছিল বলে অভিযোগ, ঠিক উল্টো ভাবে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে অন্যতম মূল চক্রী বলে অভিযুক্ত কওসর ওরফে বোমা মিজান ধরা পড়েছিল বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠ থেকে। ২০১৮ সালে বেঙ্গালুরুর নিকটবর্তী এক ডেরা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছিল এনআইএ। এ ছাড়াও কেরল, অসম-সহ নানা রাজ্য থেকে বেশ কয়েক জন অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়।
খাগড়াগড় কাণ্ডে অভিযুক্ত হিসেবে বাংলাদেশের কওসর থেকে মঙ্গলকোটের ইউসুফ-সহ বেশ কিছু নাম। তদন্তে জানা যায়, নানা জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গিরা থাকতে শুরু করেছিল। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ার নাম উঠে আসে। সেখানে মেয়েদের জেহাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত বলেও অভিযোগ ওঠে। তদন্ত চলাকালীন খাগড়াগড়ে এসেছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও।
এনআইএ সূত্রে জানা যায়, খাগড়াগড় কাণ্ডের পরেই পশ্চিমবঙ্গে তাদের নিজস্ব পরিকাঠামোয় অফিস গড়া হয়। বর্তমানে রাজ্যের অনেকগুলি মামলার তদন্তভারই এনআইএ-র হাতে রয়েছে। খাগড়াগড় কাণ্ডের পরে জঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ টাস্ক ফোর্সও (এসটিএফ) গঠন করেছে রাজ্য। ওই ঘটনার পরে বর্ধমান স্টেশন থেকে জঙ্গি সন্দেহে এক জনকে সিআইডি গ্রেফতার করে। তদন্তে জানা গিয়েছিল, জেএমবি এবং আইএসের মধ্যে ‘লিঙ্কম্যান’-এর কাজ করছিল মুসা নামে ওই অভিযুক্ত। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, টানা ধরপাকড়ের জেরে জেএমবি কিছুটা সুপ্ত হয়ে যায়, আগের তুলনায় ‘সক্রিয়তা’ হারায়। তবে তদন্তকারী নানা সংস্থার দাবি, খাগড়াগড়ের ঘটনার পরে জেএমবি-র মধ্যে দু’টি ভাগ তৈরি হয়। পুরনো অংশ আইএসের সঙ্গে থাকলেও, নব্য জেএমবি জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের দূরত্ব তৈরি হয়। অস্তিত্ব রক্ষায় এই নব্য জেএমবি জঙ্গিরা আল কায়দার ছাতায় তলায় আশ্রয় নেয় বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। রাজ্যের এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘খাগড়াগড়ের পরে পূর্ব বর্ধমানেও আর জঙ্গি কার্যকলাপ বা ডেরার খোঁজ পাওয়া যায়নি।’’
এ দিন বর্ধমান ২ ব্লকের রামাইপুরে প্রচারে এসে দিলীপ ঘোষ এ নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ভারতবর্ষের যেখানে বিস্ফোরণ হয় তার সঙ্গে যোগ থাকে পশ্চিমবঙ্গের। অনুপ্রবেশকারীরা এখানে আসে, রোহিঙ্গারা আসে, আধার কার্ড বানায়, রেশন কার্ড, পরিচয়পত্র নিয়ে সারা দেশে চলে যায় চক্রান্ত করে। কেন বারবার পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঙুল উঠবে। এখানকার সরকার কেন দেখে না!’’ এনআইএ তদন্ত হলে শিকড়বাকড় সব বেরিয়ে আসবে বলেও দাবি করেন তিনি। দিলীপ ের সংযোজন, ‘‘সবে অ্যাসিড ঢালা হয়েছে ইঁদুর, পোকামাকড় সব বেরোচ্ছে। ভোটের পরে সব বেরিয়ে আসবে।’’
পাল্টা তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাসের দাবি, ‘‘কলকাতা পুলিশই তো ধরেছে জঙ্গিদের। বিজেপিশাসিত রাজ্যেই এ সব ঘটনা বেশি ঘটে।’’