আসানসোলে। নিজস্ব চিত্র
সাম্প্রতিক সময়ে জেলা তৃণমূলের অন্দরে কুলটি-সহ নানা জায়গায় ‘কোন্দল’ দেখা গিয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দলেরই একাংশের। এই আবহে দলের জেলা সভাপতি হওয়ার পরে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী প্রথম বৈঠক করলেন রবিবার। এ দিনের বৈঠকে তিনি সবাইকে এক জোট হওয়ার বার্তা দিয়েছেন বলে দাবি। বৈঠকে মন্ত্রী মলয় ঘটক, প্রদীপ মজুমদার এবং দুই পুরসভা, জেলা পরিষদ, তৃণমূলের গণসংগঠনের নেতৃত্বেরা যোগ দেন।
রবিবার নরেন্দ্রনাথ দলের জেলা কমিটির বৈঠক ডাকেন। আসানসোলে ঘণ্টা দুয়েকের ওই বৈঠকে বার বার নরেন্দ্রনাথ নেতৃত্বকে এক হয়ে চলার বার্তাই দিয়েছেন বলে দাবি। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। সে দিকে তাকিয়ে, ভোটের আগে কোনও ভাবেই যাতে ‘কোন্দল’ মাথাচাড়া না দেয়, তা-ও তিনি জানিয়েছেন বলে দাবি।
কোন্দলের কথা অবশ্য সাংবাদিকদের সামনে স্বীকার করেননি জেলা সভাপতি। তবে তিনি স্বীকার করেন, “দলে ক্ষোভ আছে।” পরক্ষণে এর কারণও ব্যাখ্যা করেন তিনি: “তা (ক্ষোভ) থাকবে। কারণ দল এখন বড় হয়েছে। দলের ভাল ভাবতে গিয়ে মতান্তর হতেই পারে। কিন্তু সেটা মনান্তরে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না।” পাশাপাশি, কুলটি-সহ পশ্চিম বর্ধমানের কিছু এলাকার পুরনো নেতা, কর্মীদের ফের দলে সক্রিয় করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। অনেককেই সদ্য গঠিত জেলা কমিটিতেও যুক্ত করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, এ দিন দুই বিধায়ক তাপস ও বিধানকে দেখা যায়নি বৈঠকে। পাশাপাশি, কিছু প্রবীণ নেতাও অনুপস্থিত ছিলেন বলে দাবি। এ প্রসঙ্গে নরেন্দ্রনাথের ব্যাখ্যা, “অনেকেই নানা কাজে আসতে পারেননি। দুই বিধায়ক-সহ সকলেই ফোন করে অসুবিধার কথা জানিয়েছেন।” বিধানের বক্তব্য, “আমার জেঠিমা মারা গিয়েছেন। তাই এখন কোথাও যাচ্ছি না।”প্রতিক্রিয়া মেলেনি তাপসের।
পাশাপাশি, গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীরা ব্যাপক সন্ত্রাসের অভিযোগ করেছিলেন। যদিও সে অভিযোগে আমল দেয়নি তৃণমূল। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এই ‘সন্ত্রাসের’ ফলে, ওই পঞ্চায়েত ভোটের পরের লোকসভা ভোটে ধাক্কা খায় তৃণমূল। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, এই অভিযোগের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে দিকে তাকিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ স্তর থেকেই বার বার বার্তা দিতে দেখা যাচ্ছে এ বার। কার্যত সে বার্তার রেশ শোনা যায় নরেন্দ্রনাথের গলাতেও। তিনি বলেন, “বিরোধীদের যদি মনে হয়, কোথাও বাধা পাচ্ছেন, তবে আমাকে জানান।আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” পাশাপাশি, তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। যদিও,নরেন্দ্রনাথের বক্তব্যে আমল দেয়নি বিজেপি। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে’র বক্তব্য, “পাণ্ডবেশ্বর-সহ জেলার নানা প্রান্তে যাঁর নেতৃত্বে বিরোধীদের উপরে সন্ত্রাস চালানো হয়েছে, তাঁর মুখে এমন কথা মানায় না। আর কেন্দ্রের কোনও সংস্থা ষড়যন্ত্র করে না। তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা এমন দুর্নীতি করেছেন যে, ভয়ে পাঁচিল টপকে পুকুরে ফোন ফেলতে হচ্ছে!”
এ দিকে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সংগঠন মজবুত করতে রবিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুর-ফরিদপুর এবং পাণ্ডবেশ্বর ব্লক তৃণমূল, যুব তৃণমূল এবং মহিলা তৃণমূলের কমিটি ঘোষণা করলেন নরেন্দ্রনাথ। পান্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি কিরীটী মুখোপাধ্যায় এবং দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কমিটি ঘোষণা করা হয়। দুই ব্লকে যথাক্রমে ২১ এবং ২৫ জনের ব্লক কমিটি গঠন করা হয়েছে।