সেতুতে ওঠার মুখে এ ভাবেই পাঁচিল দেওয়া রয়েছে। নিজস্ব চিত্র
উদ্বোধন হল, কিন্তু ওঠা গেল না রেলসেতুতে।
সোমবার বিকেলে রাজ্যের তরফে আচমকা ওই সেতু উদ্বোধনের কথা জানানো হয়। কিছুক্ষণ পরে রেলের তরফেও দাবি করা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর ওই সেতু উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল। একই সেতুর দু’ভাগে উদ্বোধন কেন, তা নিয়ে অবশ্য সরাসরি কেউ মন্তব্য করতে চাননি।
মঙ্গলবার দুপুরে মেদিনীপুর থেকে ওই সেতুর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমান পুরসভার কাছেও একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছিলেন আর এক মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। উড়ালপুলের সংযোগকারী রাস্তায় কিছুটা হাঁটেনও তাঁরা। কিন্তু সেতু ‘বন্ধ’ ছিল ‘রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেডের’ লোহার পাঁচিলে। পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী আগেই জানিয়েছিলেন, সরকারি ভাবে তাঁরা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। এ দিনও কিছু বলতে চাননি তিনি।
উড়ালপুলের উপরে উঠে দেখা যায়, চারিদিকে বাঁশ লাগিয়ে সেতুতে রঙ করা হচ্ছে। ট্র্যাফিক সিগন্যাল লাগানো হচ্ছে। দুর্গাপুরের দিকে মেহেদিবাগান, কাটোয়ার দিকে বাজেপ্রতাপপুর, জেলাশাসক দফতরের সামনেও আরভিএনএলের লোহার পাঁচিল রয়েছে। পুরসভার কাছেও ওই পাঁচিল ছিল। যদিও ফিতে কাটার পরে পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা সেটি সরিয়ে দেন। সুব্রতবাবু বলেন, “সেতুর উদ্বোধন আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী করে দিয়েছেন। তার পরেই আমরা হেঁটে গেলাম।’’ তবে সেতু দিয়ে কবে যান চলাচল করবে, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। আর ‘পাঁচিল’ নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমরা যদি মনে করি এই সেতু দিয়ে হেঁটে যাব, কেউ আটকাতে পারবে না। কিন্তু আমরা কিছু করছি না। রেল কী করবে তা তারা বুঝবে। এই সেতুর উদ্বোধন হয়ে গেল আজ।’’
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেতু থেকে মূলত চারটি সংযোগকারী রাস্তা বার হয়েছে। নবাবহাটের দিকে ১৯৭ মিটার, পুরসভার সামনে পর্যন্ত ২৪১ মিটার, কাটোয়া রোডের দিকে ১৯৮ মিটার, জেলাশাসকের বাংলো পর্যন্ত ১৬৩ মিটার। পূর্ত দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (পশ্চিমাঞ্চল) দিলীপ বৈদ্য বলেন, “সেতু তৈরি করতে ২৮৭ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বেশির ভাগটাই রাজ্য সরকার দিয়েছে।’’ দফতরের কর্তাদের দাবি, রাজ্য সরকার ১৬৭ কোটি টাকারও বেশি সেতু নির্মাণকারী সংস্থাকে দিয়েছে। যদিও আরভিএনএলের তরফে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে, সেতু তৈরি করতে ৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য অর্ধেক করে তা বহন করেছে।
হঠাৎ উদ্বোধন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। তাঁর দাবি, “এরা তো জোর-জবরদস্তি করতে চাইছে। সেতুর উপর গাড়ি তো চাপাতে পারছে না। তাহলে এত তাড়াহুড়ো কিসের!’’ তাঁর আরও দাবি, যে সংস্থা সেতু তৈরি করছে, তারা এখনও গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়নি। সমস্ত রকম পরীক্ষার পরে ৩০ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী সেতু উদ্বোধন করবেন। যদিও পূর্ত দফতরের দাবি, গত এপ্রিলেই আরভিএনএল লিখিত ভাবে জানিয়ে দেয়, সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলে কোনও অসুবিধা নেই।
রাত পর্যন্ত সংযোগকারী রাস্তায় ওঠার মুখে পাঁচিল রয়েই গিয়েছে।