প্রতীকী ছবি।
এ বছরের শেষেই পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনি ব্লকে নতুন একটি কয়লা খনি প্রকল্প তৈরির প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করবে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’। সম্প্রতি দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্প সচিব বন্দনা যাদব। প্রকল্পটি রূপায়ণে এখন পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র পাওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই, জমিদাতাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও আদিবাসীদের উপযুক্ত পুনর্বাসন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন বিরোধীরা।
গত বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে বারাবনির দিঘলপাহাড়ি, গৌরান্ডি, দাসকেয়ারি এলাকায় প্রস্তাবিত খনি প্রকল্পের কাজ কত দূর এগিয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে রাজ্যের শিল্প সচিব বন্দনা যাদবকে বিস্তারিত বিষয়টি জানানোর নির্দেশ দেন।
বন্দনা বলেন, “গৌরান্ডির কয়লা খনিটি এমডিটিসি (মিনারেল ডেভেলপমেন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশন) নিজেই করবে। ইসি (পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র) পাওয়ার আবেদন করা হয়েছে। এই বছরের শেষে কাজ আরম্ভ হবে।”
এ দিকে, সরকারের শিল্প দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৪০০ একর জমিতে খোলামুখ খনি প্রকল্প গড়া হবে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, যে এলাকায় খনি হবে, তার বেশির ভাগই সরকারি খাস জমি ও বন দফতরের বনাঞ্চল। অল্প সংখ্যক ব্যক্তিগত মালিকানাধীন জমি আছে। সরকারের তরফে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে ব্যক্তিগত মালিকদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে। কর্পোরেশনের তরফে প্রাথমিক ভাবে একর পিছু ১৮ লক্ষ টাকা জমির দাম ধার্য করা হয়েছে। দু’একর জমি পিছু একটি করে চাকরি দেওয়া হবে। কেউ চাকরি না নিলে, ১৫ লক্ষ টাকা এককালীন অর্থ নিতে পারেন। তবে জমিদাতারা একর পিছু জমির দাম ২৪ লক্ষ টাকা করে চেয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এখানেই শেষ নয়। বহু বছর ধরে সরকারি খাস জমিতে থাকা আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষকেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তাঁদের পরিবার পিছু দু’কাঠা জমির পাট্টা ও একটি বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
কর্পোরেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ওই এলাকায় ১৩৯ একর খাস জমির সন্ধান মিলেছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে ওই জমিতেই প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা আছে। রাজ্য সরকারের দাবি, প্রকল্পটি তৈরি হলে, ন্যূনতম এক হাজার মানুষের সরাসরি কর্ম সংস্থান হবে। পরোক্ষে, আরও ১০ হাজার মানুষের কর্ম সংস্থান হবে। তিন পর্যায়ে খনি তৈরি হবে। বিনিয়োগ হবে ১,৫০০ কোটি টাকার আশপাশে। খনিটি পূর্ণ মাত্রায় চালু হলে, আশপাশের অঞ্চলে ক্ষুদ্র অনুসারী শিল্প গড়ে উঠবে। সেখানেও বহু যুবকের কাজ হবে। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “খনিটি হলে, এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র বদলে যাবে।” বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়ের দাবি, “স্থানীয়দের সঙ্গে কম পক্ষে ১০টি বৈঠক করা হয়েছে। প্রত্যেকেই প্রকল্প গড়ে তোলার পক্ষ রায় দিয়েছেন।” এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বাসিন্দাদের একাংশও। গৌরান্ডির শিবেন মাহাতো, দাসকেয়ারির সুভাষ সিংহরা বলেন, “সরকার উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিলে, নিশ্চই জমি দেব। কারণ, এখানকার বেশির ভাগ জমিই চাষের অনুপযুক্ত।”
কিন্তু ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে বলে জানাচ্ছেন শিবডাঙা, দিঘলপাহাড়ি লাগোয়া খাস জমি ও বনাঞ্চলে থাকা আদিবাসীরা। স্থানীয় বাসিন্দা বিনোদ মারান্ডি বলেন, “আমরা কয়েক পুরুষ ধরে বন লাগোয়া জমিগুলিতে বসবাস করছি। তা হলে সেগুলি খাস জমি হল কী ভাবে? উচ্ছেদ করার আগে, আমাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু করছেন বিরোধীরাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বন-জঙ্গলে আদিবাসীদের মৌলিক অধিকার। সেখান থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করা যায় না। অন্যায় হলে, আমরা আন্দোলন করব।” বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে বলেন, “ডেউচা-পাঁচামির মতো, আমরা এখানেও বিরোধিতা করব।” যদিও বিরোধিতা প্রসঙ্গে তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক অভিজিৎ ঘটক বলেন, “মানুষকে নিয়েই ওই প্রকল্প গড়া হবে। স্থানীয়েরাই নিজেদের জীবন-যাপনের মানের উন্নয়ন চেয়ে খনি তৈরির বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছেন। সেখানে বিরোধীদের প্রচারে কেউ ভুলবেন না।”