প্রতীকী চিত্র।
সিনেমা দেখতে যাওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া নিয়েছিল বন্ধু। গাড়ি নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করবেন জানিয়ে চালককে গাড়ি নিয়ে ফিরে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু তার পরে নিজে আর ফেরেননি। দু’দিন পরে এক খনি আবাসন থেকে দড়ি দিয়ে হাত ও গামছায় মুখ বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হয় তাঁর মৃতদেহ।
২০০৩ সালের ১৪ অগস্ট জামুড়িয়ার বোগড়াচটির বাসিন্দা সুনীল বাউরির (২৮) দেহ মেলে বাড়ি থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে নিঘায় এক আবাসনে। ঘটনার পরে ১৪ বছর পেরোতে চললেও এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি। অভিযুক্তেরা জামিনে ছাড়া পেয়েছে। কী কারণে খুন হতে হল বাড়ির ছেলেকে, এখনও তাঁদের কাছে ধোঁয়াশা বলে দাবি পরিজনের।
মৃতের দাদা রূপেণ বাউরি জানান, সুনীলকে তিনি একটি গাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। সেটি ভাড়ায় দিতেন সুনীল। সে বছর ১২ অগস্ট সকালে নিঘার বাসিন্দা রাকেশ নুনিয়া তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে জানান, রাতে আসানসোলে সিনেমা দেখতে যাবেন। সে জন্য গাড়ি ভাড়ার অগ্রিম একশো টাকাও দিয়ে যান। সুনীল সন্ধ্যায় গাড়ির চালক মিলন বাউরিকে সঙ্গে নিয়ে ঘাঘরবুড়ি মন্দির থেকে রাকেশ ও নীরজ সিংহ নামে আর এক জনকে গাড়িতে চাপিয়ে সিনেমা হলে যান। কিন্তু তার পরেও কোনও কারণে সিনেমা না দেখে তারা ফিরে আসেন।
রূপেণবাবু বলেন, “সে রাতেই চালক গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। তার কাছে জানতে পারি, সুনীল রাকেশদের সঙ্গে রাতে খাওয়াদাওয়া করে ওদের সঙ্গে থেকে যাবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু পরের দিনও না ফেরায় বন্ধুদের কাছে খোঁজ নেওয়া শুরু করি।’’ তার পরের দিন সকালে নিঘায় একটি খনি আবাসন থেকে সুনীলের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রূপেণবাবুর দাবি, সুনীলেন দুই হাত দড়ি দিয়ে ও মুখ গামছা দিয়ে বাঁধা ছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমি মুক্তিপদ দুবে, সতীশ দুবে, রাকেশ নুনিয়া, নীরজ সিংহ ও মিথিলেশ কুমারের নামে খুনের অভিযোগ দায়ের করি।’’ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রথমে নীরজ সিংহকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরে একে-একে পাঁচ জনই ধরা পড়ে। আদালত থেকে জামিনও পেয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১১ নভেম্বর মামলার চার্জশিট পেশ করা হয়েছে আদালতে। সেখানে মুক্তিপদ দুবে, রাকেশ নুনিয়া ও মিথিলেশ কুমারকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। বিহারের গয়ার বাসিন্দা অখিলেশ সিংহ ও স্থানীয় ছাতাপাথরের বাসিন্দা দুর্যোধন পাসোয়ান, সতীশ দুবে, নীরজ সিংহেরা ষড়যন্ত্র করে খুন করেছে বলে চার্জশিটে জানানো হয়েছে। এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু না হওয়া প্রসঙ্গে আসানসোল আদালতের আইনজীবী সমীর ভট্টাচার্যের দাবি, পুলিশি তৎপরতার অভাবেই দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। পুলিশ যদিও তা মানতে চায়নি। অভিযুক্তেরা এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।
রূপেণবাবু বলেন, ‘‘এলাকায় সুনীলের সুনাম ছিল। কেন ওকে খুন করা হল, আমাদের কাছে এখনও রহস্য। শুধু চাই, দোষীদের উপযুক্ত সাজা হোক।”
২০০৩ সালের ১৪ অগস্ট জামুড়িয়ার নিঘায় খনি আবাসন থেকে উদ্ধার সুনীল বাউরির (২৮) দেহ।
নিহতের পাঁচ বন্ধুর নামে অভিযোগ দায়ের হয়। পরে আরও দু’জনের নাম যোগ হয়।
অভিযুক্তেরা জামিনে মুক্ত। ২০০৫ সালে চার্জশিট জমা দিেয়ছে পুলিশ।
আদালতে এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি।