মাথা মুড়িয়ে শ্রাদ্ধ দিলেন মুসলিম ব্যক্তি। নিজস্ব চিত্র
নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’। কবির সেই সম্প্রীতির বার্তার প্রতিফলন ঘটল তাঁর জন্মস্থান চুরুলিয়া থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে আসানসোলের রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। এক অসহায় হিন্দুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করলেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা।
হুগলি জেলার ত্রিবেণী এলাকার বাসিন্দা যোগেন্দ্র প্রসাদ দীর্ঘদিন ধরে রানিগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে কর্মরত ছিলেন। রক্তের সম্পর্কের তেমন কেউ নেই তাঁর। কাজ, থাকা, খাওয়া, ঘুম— সবই ছিল বাসস্ট্যান্ডের শ্রমিক বিশ্রামাগারে। কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর চলতি মাসের ১০ তারিখে সেখানেই মৃত্যু হয় ৫৫ বছর বয়সি যোগেন্দ্রর। হিন্দু রীতি-নীতি মেনে মৃতদেহের মুখাগ্নি করেন রানিগঞ্জের গির্জাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ শামসুদ্দিন ও তাঁর সঙ্গীরা। রানিগঞ্জের দামোদর নদের তীরে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করে দশ দিন পর হিন্দু শাস্ত্র মেনে মাথা মুড়িয়ে পিণ্ডদান করে রীতি মতো তাঁর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করলেন শামসুদ্দিন। এই কাজে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বাস মালিক থেকে স্থানীয়রা।
শ্রাদ্ধে ১০০ জন সহকর্মী ও শ্মশান যাত্রীদের ডাল, ভাত , সবজি, মাছ, মিষ্টি খাওয়ানো হয় ওই বাসস্ট্যান্ডেই। এ ভাবে এক হিন্দুর শ্রাদ্ধানুষ্ঠান ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যেভাবে শামসুদ্দিন এগিয়ে এসেছেন তা এক প্রকার বিরল কাজ বলে মন্তব্য করছেন শিল্পাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। শামসুদ্দিনের কথায়, ‘‘আমি জন্মেছি পুরুষ হিসেবে। কোনও ধর্ম নিয়ে জন্মায়নি। পরে জানতে পারি আমি কী। কিন্তু আমার পরিচয় আমি একজন মানুষ। আমি একজন মানুষ। আর এই কাজ করার সুযোগ পাওয়ায় আমি গর্ববোধ করছি।’’
স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ গড়াইয়ের কথায়, ‘‘আমার সহকর্মীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করল এক মুসলিম ব্যক্তি শামসুদ্দিন। এটা মহান কাজ। রাজনৈতিক দলাদলি ও ধর্ম নিয়ে উন্মাদনার সময়ে যে বার্তা উনি দিলেন তা শিক্ষণীয়। এই বার্তা যেন সারা দুনিয়ায়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।’’