পূর্বস্থলীর জালুইডাঙায় রেললাইনের কাছে ভাগীরথী। নিজস্ব চিত্র।
লোকসভা ভোটের প্রচারে নেমে ভাগীরথীর ভাঙনের সমস্যার কথা তাঁকে জানিয়েছিলেন কালনা, কাটোয়ার মানুষেরা। জিতে প্রথম বার সংসদে গিয়েই ভাঙন সমস্যার কথা তুলে ধরলেন বর্ধমান পূর্বের শর্মিলা সরকার। বৃহস্পতিবার কালনার পূর্বস্থলী, মাজিদা থেকে কাটোয়ার অগ্রদ্বীপের নাম করে ভাঙনের জেরে স্কুল, কলেজ, চাষজমিতে যে ক্ষতি হয়েছে তা তুলে ধরেন তিনি। যদিও বিরোধীদের দাবি, এত বছরেও ভাঙন নিয়ে স্থায়ী কাজ হয়নি কেন, সেটাই প্রশ্ন।
বহু বছর ধরে ভাঙনের গ্রাসে চাষের জমি, বসত বাড়ি, বাগান হারিয়েছেন এখানকার মানুষ। নদী গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে রাস্তা, নদী সেচ প্রকল্প, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইদগাহ। অনেকে ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, প্রাক্তন সাংসদ সুনীল মণ্ডল ভাঙন কবলিত এলাকার তালিকা তৈরি করেছিলেন। তবে মেরামতিতে তেমন অর্থ বরাদ্দ হয়নি। এ দিন শর্মিলা কাটোয়ার অগ্রদ্বীপ, কৃষ্ণপুর পলাশি, পিলা, পাটুলি, ঝাউডাঙা, মাজিদা, ডাঙাপাড়া, কালীনগরের মতো এলাকার নাম করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সমুদ্রগড়ের জালুইডাঙা এলাকায় রেললাইনের ১০০ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে নদী। নিয়ত ক্ষতি হচ্ছে স্কুল, বাজার, সেতু, শ্মশানঘাটে। জালুইডাঙা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ব্যান্ডেল-কাটোয়া রেললাইনের একটি জায়গার দূরত্ব ভাঙন এলাকা থেকে মাত্র ৪০ মিটার।
স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস পাল বলেন, ‘‘বসতবাড়ি, চাষের জমি আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বছর খানেক আগে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বাঁশের খাঁচা এবং বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু ফের নীচের অংশ ক্ষয়ে পাড় ভাঙতে শুরু করেছে কিছু কিছু জায়গায়।’’ রেললাইনের চারপাশে ওই এলাকায় বেশ কিছু পরিবারেরও বাস। বাসিন্দাদের দাবি, কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না মিললে পাকা সমাধান হবে না। পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক বলেন, ‘‘ভাঙনের জেরে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ভেঙে পড়বে।রেললাইনের এত কাছে নদী তার পরেও কেন জালুইডাঙার পরিস্থিতি নিয়ে রেল উদাসীন, বুঝতে পারছি না। যে টুকু কাজ হয়েছে সবই মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের চেষ্টায়।’’
পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের কালীনগর গ্রাম থেকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের বেশ কিছু কাবাডি খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। প্রাক্তন জাতীয় খেলোয়াড় হাবিব শেখ জানান, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গ্রামে ভাঙন রুখতে কিছু কাজ হয়েছে। তবে ঘাটে যেখানে নৌকায় যাত্রীদের নামানো হচ্ছে, সেখানে বাড়ছে ভাঙন। পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাঙন এলাকাগুলির কথা তুলে ধরেছেন সাংসদ। এই মুহূর্তে ঝাউডাঙা এলাকায় প্রায় ১৫০০ মিটার এলাকায় ভাঙন রোখা জরুরি। পাটুলির দামপাল, মাজিদার তামাঘাটা, নিমদহের যজ্ঞেশ্বরপুর, পাটুলির ন’পাড়া, পিলার শিমুলডাঙা এলাকাতেও ভাঙনের সমস্যা রয়েছে।’’
অগ্রদ্বীপে ভাঙন-সমস্যা ২০ বছরেরও বেশি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোট আসে, নানা দল আসে, প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু কাজ কিছুই হয় না। অগ্রদ্বীপ ঘোষপাড়ার সহদেব ঘোষ বলেন, ‘‘রাজ্য সড়ক তলিয়ে যাওয়া দেখেছি। কত লোক এলাকা ছেড়ে চলে গেল। কিন্তু স্থায়ী কাজ হয় না। এ বারের সাংসদ কাজ করলে, তার থেকে ভাল আর কি!’’