অণ্ডালের শঙ্করপুর গ্রামে পরিত্যক্ত খোলামুখ খনিতে তখনও চলছে উদ্ধারকাজ। নিজস্ব চিত্র
এক দিন পরে, পরিত্যক্ত খোলামুখ খনি থেকে উদ্ধার হল নিখোঁজ প্রৌঢ়ের দেহ। বৃহস্পতিবার পশ্চিম বর্ধমানের অণ্ডালের ছোড়া পঞ্চায়েতের শঙ্করপুর গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম শেখ কুদ্দুস (৫৪)। বাড়ি শঙ্করপুরেই। কী ভাবে এমন ঘটল তার তদন্তের দাবি জানিয়েছেন মৃতের ভাই শেখ রফিকুল। পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের জন্য দেহ আসানসোল জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম রায় জানান, খবর পাওয়ার পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত করছে।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি শেখ কুদ্দুস। সন্ধ্যা থেকে পরিবারের সদস্য ও পড়শিরা তাঁর খোঁজ শুরু করেন। বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও এ দিন তাঁর সন্ধান মেলেনি। বৃহস্পতিবার সকালে কিছু লোক গ্রাম লাগোয়া একটি পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির পাড়ে ওই প্রৌঢ়ের চটি, জামা, প্যান্ট জামা দেখতে পান। খবর পেয়ে আরও লোকজন জড়ো হন। কয়েকজন বাসিন্দা খাদানের জলে নেমে তল্লাশি শুরু করেন। ঘণ্টাখানেক তল্লাশি চালানোর পরেও তাঁর হদিস না পেয়ে উখড়া পুলিশ আউটপোস্টে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে স্থানীয় বাসিন্দারা ডুবুরি আনার দাবি জানান। দুপুর ১২টা নাগাদ আসেন স্থানীয় বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বিকেল ৩টে নাগাদ আসেন আট জন ডুবুরি। ঘণ্টা দু’য়েক পরে ওই প্রৌঢ়ের দেহ উদ্ধার করে ডুবুরির দল।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় পাঁচ বছর আগে কুমারডিহি কাছে পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির জলাশয়ে ডুবে মৃত্যু হয়েছে এক খনিকর্মীর। সেখানেই বছর দু’য়েক আগে উখড়ার এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বছর তিনেক আগে সিঁদুলির কাছে পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির জলাশয় থেকে এক যুবকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ফের পরিত্যক্ত খনির জলাশয়ে মৃত্যুর ঘটনায় ইসিএলের দিকে আঙুল তুলেছেন বাসিন্দারা। জিতেন্দ্র তিওয়ারি, সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রবীর মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী, কয়লা উত্তোলনের পরে খোলামুখ খনিগুলি ভরাট করে দেওয়ার কথা। কিন্তু ইসিএল কর্তৃপক্ষ তা তো করছেনই না, তার চারপাশে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরাও হচ্ছে না। ফলে, এ ধরনের ঘটনা বারবার ঘটছে।’’ এর দায় সংস্থা এড়িয়ে যেতে পারে না বলে দাবি তাঁদের।
ইসিএলের সিএমডি’র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের অবশ্য দাবি, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় বাসিন্দারা পরিত্যক্ত খোলামুখ খনির জলাশয়ের জল ব্যবহার করেন। বাসিন্দাদের একাংশ জলাশয় ভরাট করতে দেন না। কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হলে কিছু দিনের মধ্যেই সেই তার দুষ্কৃতীরা খুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে।’’