‘ক্রাইম সিরিজ়’ দেখএ খুন করার পরিকল্পনা। প্রতীকী চিত্র।
‘ক্রাইম সিরিজ়’ দেখে পরিবহণ ব্যবসায়ী তথা কলেজ ছাত্র অবিনাশ ঝা (১৯)-কে খুনের পরিকল্পনা করেন ধৃত যুবক বিট্টু সিংহ ও তরুণী আফরিন খাতুন। জেরায় ধৃতদের কাছ থেকে এই তথ্য মিলেছে বলে দাবি পুলিশের। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, “ধৃতরা জেরায় অপরাধের কথা স্বীকার করেছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেনাচিতির নতুনপল্লি এ-ব্লকের বাসিন্দা অবিনাশ ঝা বিধাননগরের একটি বেসরকারি কলেজের বিসিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে মা তিনু ঝায়ের সঙ্গে পড়াশোনার পাশাপাশি, পারিবারিক পরিবহণ ব্যবসার কাজকর্মও তিনি দেখাশোনা করতেন। ১ মার্চ বিকেল ৪টে নাগাদ বাড়ি থেকে ভিড়িঙ্গিতে পরিবহণ সংস্থার কার্যালয়ের উদ্দেশে বেরিয়ে যান। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মায়ের সঙ্গে ফোনে শেষবার কথা হয়। ২ মার্চ সকালে হাত, পা, মুখ বাঁধা অবস্থায় অবিনাশের দেহ উদ্ধার হয় গোপালমাঠের বনগ্রাম সংলগ্ন ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশ থেকে। মাথা, গলা ও হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
পুলিশ তদন্ত নেমে সোমবার গ্রেফতার করে নঈমনগরের আফরিন এবং বিজুপাড়ার বিট্টুকে। বর্তমানে তাঁরা পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিট্টুকে বছর দুয়েক আগে এক মহিলাকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে ছাড়া পান।
এ দিকে, তদন্তকারীদের দাবি, অবিনাশকে খুনের পিছনে সম্পর্কগত টানাপড়েন রয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছেন, বিট্টুকে বাগে আনতে অবিনাশ নানা ভাবে ভয় দেখান। এর পরেই তাঁরা অবিনাশকে সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন। টেলিভিশনে বেশ কিছু ক্রাইম সিরিজ়, ধারাবাহিক দেখে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নেন বিট্টুরা বলে দাবি পুলিশের। তদন্তকারীদের দাবি, সেই মতো বুধবার রাতে আফরিন গল্ফনগরে বিট্টুর বাড়িতে অবিনাশকে নিয়ে যান। সেখানে বিয়ার খাওয়ানো হয় অবিনাশকে। এর পরে রড, বিয়ারের বোতল দিয়ে খুন করা হয়। তাঁর হাত-পা বেঁধে মোটরবাইকে করে রাতের অন্ধকারে দু’জন অবিনাশের দেহ জাতীয় সড়কের ধারে ফেলে আসেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই ধৃতদের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে পুলিশ। তবে অবিনাশের মোবাইল ফোনটি এখনও পাওয়া যায়নি। কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত জানান, বিট্টু ও তাঁর দুই ভাই ২০২১-এর ডিসেম্বরে বসুন্ধরা পার্কে এক মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন বিট্টু। পরে জামিন পান। ধৃতদের দু’টি মোবাইল পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। অবিনাশের মোবাইলটি পেলে, আরও কিছু সূত্রে মিলবে বলে আশা তদন্তকারীদের।