বিয়ে রোখার পরেও কী ভাবে বিয়ে

সম্প্রতি মেমারির মামুদপুরে শ্বশুরবাড়িতে এক ‘কিশোরী বধূর’ ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে এমন নানা উদাহরণের কথা জানা গিয়েছে।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৮
Share:

ছবি: সংগৃহীত

কয়েক মাস আগে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির শ্রীধরপুরের এক নাবালিকার বিয়ে আটকায় চাইল্ডলাইন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই আঠারো বছর হওয়ার আগেই তার বিয়ে হয়। ভাতারের কুলচন্দা, বেলডাঙা এলাকাতেও বিয়ে আটকানোর কয়েক দিনের মধ্যে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনই নানা ঘটনার কথা জানা গিয়েছে স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে।

Advertisement

সম্প্রতি মেমারির মামুদপুরে শ্বশুরবাড়িতে এক ‘কিশোরী বধূর’ ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে এমন নানা উদাহরণের কথা জানা গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিয়ে আটকানোর পরে প্রশাসনের ‘নজর’ এবং অভিভাবকদের একাংশের মানসিকতা ও সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংশ্লিষ্ট পক্ষ।

‘চাইল্ডলাইন’-এর বর্ধমানের কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ চৌবের অবশ্য দাবি, “আগে অভিভাবকেরা মুচলেকা দিলেই হয়ে যেত। তবে নানা কারণে, গত তিন মাস ধরে বিয়ে আটাকানোর পরে নাবালিকা ও তার অভিভাবকদের শিশুকল্যাণ কমিটির আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ যাচ্ছে। ফলে, মেয়ে নাবালিকা থাকা অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে অভিভাবকদের হাজিরা দিতে হয়। এ জন্য লুকিয়ে বিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাচ্ছে।’’

Advertisement

প্রশাসনের হিসেবে জেলায় নাবালিকা বিয়ে আটকানোর নিরিখে প্রথম ভাতার ব্লক। তার পরে রয়েছে আউশগ্রাম, জামালপুর ব্লক। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের দাবি, ‘‘নাবালিকার বিয়ে আটকানো বেশি মানে, সেই ব্লকে বিয়ে বেশি হচ্ছে, এমনটা নয়। বরং, সেই ব্লক বেশি সচেতন বলেই আমরা খবর পাচ্ছি।’’

‘চাইল্ডলাইন’ সূত্রে জানা যায়, গত বছর তারা ১৬৮টি এবং কন্যাশ্রীরা ৬৪ জন নাবালিকার বিয়ে আটকেছে। অথচ, চলতি বছরে, গত এপ্রিল থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ‘চাইল্ডলাইন’ ১৭৩টি এবং কন্যাশ্রীরা ৬৪টি বিয়ে আটকেছে।

কিন্তু প্রশাসনেরই একটি সূত্রের অনুমান, ‘চাইল্ডলাইন’ বা ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’গুলি বছরে যত জনের বিয়ে আটকায়, তার অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ নাবালিকার ‘লুকিয়ে’ বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা। এর কারণ শুধু নজরদারিতে ‘ঢিলেমি’ নয়, বরং অভিভাবকদের একাংশের সচেতনতা ও মানসিকতাও এর জন্য দায়ী বলে মত একাংশের। ‘চাইল্ডলাইন’-এর দাবি, বিয়ে আটকাতে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ অভিভাবকের একটাই বক্তব্য, ‘‘ভাল পাত্র, তাই বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। পরে যদি আবার ‘অন্য রকম’ কিছু হয়।’’ মনোবিদ অমিতাভ দাঁয়ের প্রশ্ন, ‘‘অনেক অভিভাবকই মনে করেন, ১৫-১৬ বছরে মেয়ের বিয়ে দেব। তাই, ‘মেয়েবেলা’ পড়তেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু করা হয়। বিয়ে আটকানোর পরে সেই মেয়েরাই ভাল ফল করছে কী ভাবে? এই বিষয়টাই অনেকে বুঝতে চান না।”

শিশুকল্যাণ কমিটির চেয়ারম্যান লিয়াকত আলি বলেন, “বিয়ে আটকানো হচ্ছে যে সব নাবালিকাদের, তাদের ‘নজরদারি’র মধ্যে রাখা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে সকলকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক হুমায়ুন বিশ্বাস বলেন, “সামাজিক সচেতনতার জন্য আমরা আরও বেশি জোর দিয়েছি। ফলে, নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কমেছে। বিয়ে আটকানোর জন্য খবরও অনেক বেশি আসছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement