মাটি খুঁড়লে বিপত্তির আশঙ্কা খনিকর্তাদের

খাদানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটির মুখ থেকে দক্ষিণ দিক প্রায় ৪০ মিটার মাটি কাটা হলেই নিখোঁজদের সন্ধান মিলবে। যদিও এ বিষয়ে রীতিমতো সন্দিহান ইসিএলের আধিকারিক ও খনি বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

কুলটি শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০২:০৬
Share:

আলডিহির খাদানের মুখে বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

খনি রাষ্ট্রায়ত্তকরণের আগে এলাকায় কয়লা উত্তোলন করেছে বেসরকারি সংস্থা। তার পরে চলেছে বেআইনি খনন। কুলটির আলডিহির যে জায়গায় খাদানে নেমে তিন যুবক নিখোঁজ হয়েছেন, সেই এলাকার খনির কোনও নকশা নেই তাঁদের কাছে, জানাচ্ছেন ইসিএলের আধিকারিকেরা। সে কারণে বাসিন্দারা উদ্ধারকাজের দাবিতে সরব হলেও যন্ত্র নামিয়ে সেখানে মাটি কাটা হলে অন্য নানা বিপত্তি দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

Advertisement

বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে যন্ত্র নামিয়ে খাদান লাগোয়া এলাকার মাটি কেটে দ্রুত নিখোঁজদের উদ্ধারের চেষ্টা শুরুর দাবি তোলেন কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, যে খাদানে ঘটনাটি ঘটেছে সেটির মুখ থেকে দক্ষিণ দিক প্রায় ৪০ মিটার মাটি কাটা হলেই নিখোঁজদের সন্ধান মিলবে। যদিও এ বিষয়ে রীতিমতো সন্দিহান ইসিএলের আধিকারিক ও খনি বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের দাবি, ওই অঞ্চলটি জটিল ও বিপজ্জনক। যন্ত্র নামিয়ে মাটি কাটলেও নিখোঁজদের হদিস মেলার বিষয়টি অনিশ্চিত। উল্টে এলাকায় আরও বড় বিপদ তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে গোটা ঘটনার দায় পড়বে ইসিএলের উপরেই।

সংস্থার বিশেষজ্ঞেরা জানান, খনি রাষ্ট্রায়ত্তকরণের আগে আলডিহির ওই অংশে কয়লা তুলেছে বেসরকারি খনি সংস্থাগুলি। তাই এলাকার কোথায় কতগুলি খাদান আছে, তার কোনও নকশা ইসিএলের হাতে নেই। ইসিএল নিজে সেখানে কয়লা না তোলায় নকশা তৈরি করেনি। পরে এলাকায় অবৈজ্ঞনিক উপায়ে অবৈধ খাদান খোঁড়া হয়েছে। তাই জঙ্গল ঘেরা গোটা এলাকায় অজস্র ছোট-বড় খাদান আছে। সেখানে মাটি কাটার ভারী যন্ত্র নিয়ে গেলে যে কোনও সময়ে তা গর্তে পড়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। প্রাণহানিও হতে পারে।

Advertisement

খনি বিশেষজ্ঞেরা আরও জানান, ২০০৭ ও ২০১১ সালে পরপর দু’টি দুর্ঘটনার পরে ইসিএল এবং প্রশাসনের উদ্যোগে ওই এলাকার একাধিক অবৈধ খাদান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই দিয়ে ভরাট করা হয়েছিল। এই ছাই অত্যন্ত হাল্কা। কয়েকদিনের চড়া রোদে সেই ছাই শুকিয়ে মাটির উপরের অংশ আরও আলগা হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বড় যন্ত্র নামিয়ে মাটি কাটা শুরু হলে ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত খাদানটির মুখ পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন নিখোঁজদের উদ্ধারের কোনও সুযোগই থাকবে না।

এ ছাড়া, দুর্ঘটনাগ্রস্ত খাদানটির পাশেই একটি জলে ভরা পুকুর আছে। সম্প্রতি বর্ষায় জল বেড়েছে। এমনকি, খাদানের ভিতরেও জল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময়ে পুকুরের পাড় ধসে জলের স্রোত খাদানে ঢুকে যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাতেও উল্টে বিপদ বাড়বে।

ইসিএলের সোদপুর এরিয়ার জিএম সৌমেন্দু কুণ্ডু বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকির। এ সব ঝুঁকির দিকও আমাদের ভাবতে হচ্ছে।’’ যদিও বিধায়ক উজ্জ্বলবাবু তা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, এর চেয়ে অনেক দুর্গম জায়গায় ইসিএল মাটি কাটার যন্ত্র নামিয়ে খোলামুখ খনি খোঁড়ে। তাই এ ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement