পাখি গণনা চলছে ছাড়িগঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র
চুপির পরে কালনার ছাড়িগঙ্গায় পাখি গণনা করল বন দফতর। এ বার প্রথমবার এই জলাশয়ে পাখি গণনা হল। প্রাথমিক ভাবে ৪৬টি প্রজাতির পাঁচ হাজারেরও বেশি পাখির সন্ধান পেয়েছে বন দফতর। তবে ধান চাষের জন্য কচুরিপানা সাফ করে দেওয়ায় এই জলাশয়ে পাখিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্তারা।
রবিবার সকালে কালনা আদালতের গা ঘেঁষে ছাড়িগঙ্গায় পাখি গণনার কাজ করতে নেমে পড়েন কাটোয়ার রেঞ্জার শিবপ্রসাদ সিংহ ও বন দফতরের প্রতিনিধিরা। তবে এই জলাশয়ে নৌকা না চলায় পাড় থেকে দূরবীন, উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরার লেন্স দিয়েই চলে গণনা। ওই দলের সঙ্গে যোগ দেন কালনার মহকুমাশাসক সুরেশকুমার জগৎ, উপপুরপ্রধান তপন পোড়েল। শুধু জলাশয় নয়, আশেপাশের গাছগুলিতেও কোন কোন পাখি রয়েছে, তা খুঁটিয়ে দেখেন তাঁরা। শুকিয়ে যাওয়া গাছের কোটোরে দেখা মেলে ‘রেড ব্রেস্টেড প্যারাকিট’ নামে সিঙাপুর থেকে আসা এক ঝাঁক রঙিন পাখির। গাছটি না কাটার কথা বলেন কর্তারা। দেখা মেলে আকাশে পাক খাওয়া হাজার দেড়েক পাখির একটি ঝাঁকেরও। বন দফতরের রেঞ্জার জানান, পাখিগুলি লেসার হুইসিলিং ডাক। এ ছাড়াও ব্রোঞ্জ উইঙ্গড জাকানা, ব্ল্যাক ড্রঙ্গো, লেসার গোল্ডেন বাক, এশিয়ান ওপেন বিল স্টকও রয়েছে ওই জলাশয়ে।
কর্তারা দেখেন, ছাড়িগঙ্গা জুড়ে ধান চাষ শুরু হয়েছে। কচুরিপানা পরিষ্কার করে যত চাষের এলাকা বাড়ছে তত পাখিদের চলাফেরা, খাবার সংগ্রহ, খেলে বেড়ানোর জায়গা কমছে। অনেকেই পাখি তাড়াতে জমি ঘিরে রেখেছে রঙিন রাংতায়। বন দফতরের দাবি, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করলে অনেক পাখি মারা যাবে। তা ছাড়া মাছ ধরা, পাড় ঘেঁষে হট্টগোল হলেও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে পাখিদের। জলাশয়ের একটা বড় অংশ মজে থাকায় জল কম রয়েছে আশেপাশে ছায়া দেয় এমন বড় গাছেরও প্রয়োজন রয়েছে, জানান তাঁরা। পাখি গণনা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে বন দফতরকে রিপোর্ট পাঠাতে বলেন মহকুমাশাসক। পরিযায়ী পাখিদের জন্য কতটাজল, খাবার প্রয়োজন, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
উপপুরপ্রধান বলেন, ‘‘ভাবা যায়নি এত পরিযায়ী পাখি দেখা যাবে। প্রয়োজনে ভাগীরথী থেকে নালা কেটে জল ঢোকানো যাবে ছাড়িগঙ্গায়।’’ ছাড়িগঙ্গা ঘিরে পাখিরালয় গড়ে উঠলে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাবে বলে দাবি করেন ব্যবসায়ী সুশীল মিশ্র। হাজির ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রের বিধান বিশ্বাস, কালনা উপ সংশোধনাগারের আধিকারিক অমরজ্যোতি চক্রবর্তীও।